নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
পরকীয়া একটি অমানবিক কাজ। বিকৃত মানসিকতার আচরণ। সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো নারী-পুরুষ পরকীয়ায় লিপ্ত হতে পারে না। ইদানিং আমাদের সমাজে পরকীয়া বা বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব পরকীয়া সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি লিপ্ত হচ্ছে প্রবাসীদের স্ত্রীরা। আজকাল খবরের কাগজ হাতে নিলেই চোখে পড়ে গৃহবধূর ধর্ষণের খবর। গবেষণায় দেখা গেছে, গৃহবধূ ধর্ষণের পেছনে পরকীয়া সম্পর্কের যোগসূত্র অনেক।
পরকীয়া সম্পর্ক থেকেই বেশিরভাগ গৃহবধূ ধর্ষিতা হচ্ছে। পরকীয়া সম্পর্কে যেমন সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, তেমনি পারিবারিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অমিল দেখা দেয়। একসময় তাদের বৈবাহিক জীবনে ভাঙন সৃষ্টি হয়। পরকীয়ার বিষফল মানবজাতি দীর্ঘকাল থেকে ভোগ করে আসছে। পরকীয়ার মতো জঘন্য অপরাধ নিজের বিবেককেও ধিক্কার জানায়। নিজের স্ত্রী অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত হোক কিংবা নিজের স্বামী অন্য কোনো মহিলার সঙ্গে মেলামেশা করুক এটা কোনো সুস্থ বিবেকবানই মেনে নিতে পারেন না। ইসলামে তাই পরকীয়া-ব্যভিচার সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ইসলাম মানবিক ধর্ম। ইসলাম নীতি ও আদর্শের ধর্ম। ইসলাম হালাল তরিকায় নারী-পুরুষের মেলামেশার সুযোগ দিয়েছে। বৈধ সম্পর্কের মধ্য দিয়েই ইসলাম পৃথিবীতে মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইসলামে পরকীয়া-ব্যভিচার অবৈধ সম্পর্কে নারী-পুরুষের মেলামেশাকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। নারী-পুরুষ সবাইকেই চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা জিনা বা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। এটা অত্যন্ত খারাপ কাজ এবং খুবই জঘন্য আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৩২)
শহর কিংবা গ্রাম সবখানেই এখন চরমভাবে পর্দার বিধান লঙ্ঘন হচ্ছে। ফলে কখনও দেবরের সঙ্গে, আবার কখনও পুত্রের (স্বামীর ভাইয়ের ছেলে) সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠছে। ইসলামে দেবর ও পুত্রের (স্বামীর ভাইয়ের ছেলে) কাছে যাওয়ার লাগাম টেনে ধরা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সাবধান! তোমরা নির্জনে একাকী নারীদের কাছেও যেও না।’ এক আনসার সাহাবি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.), দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী?’ উত্তরে নবী কারিম (সা.) বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।’ (বুখারি: ৫২৩২; মুসলিম: ২১৭২)
ইসলামে শুধু অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের চূড়ান্ত রূপটাই জিনা নয়। বরং যেসব কাজ জিনার প্ররোচনা দেয় সেগুলোকেও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাকেও জিনা বলে গণ্য করা হয়। হাদিসে এসেছে, ‘চোখের জিনা হলো দেখা। কানের জিনা শোনা। জিহ্বার জিনা বলা। হাতের জিনা ধরা। পায়ের জিনা হাঁটা। মন কামনা করে আর লজ্জাস্থান তা সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে।’ (মুসলিম: ২৬৫৭)
অর্থাৎ চোখ-কান-হাত-পা-জিহ্বা সবই জিনা করে। জিনার প্ররোচনা দেয়। আর তা পূর্ণতা পায় লজ্জাস্থানের মাধ্যমে। সুতরাং এসব অঙ্গের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
পরকীয়ার মতো কর্মকাণ্ডে খুন-খারাবি থেকে শুরু করে আত্মহত্যার সিরিজ চলছে! ব্যক্তির ঘৃন্য কর্মকাণ্ডের দায়ে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা পর্যন্ত সমাজে মুখ দেখাতে পারছে না। এসব নোংরা অধঃপতিত কুকর্মগুলো পরিবার, সমাজ ও সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের কপালে ভয়ঙ্কর এক পৈশাচিক অশ্লীলতার তিলক লাগিয়ে দিচ্ছে। সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় অনুশাসন থেকে ছিটকে পড়া আমাদের আধুনিক এই সমাজব্যবস্থা এটাকে প্রতিরোধ করার সক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছে। ব্যভিচারী পুরুষ ও ব্যভিচারিণী নারীদের শাস্তি সম্পর্কে বিচারকদের সতর্ক করে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষ উভয়ের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত করো। আর আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি কোনো মমত্ববোধ ও করুণা যেন তোমাদের মনের মধ্যে না জাগে যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনো। আর তাদেরকে শাস্তি দেয়ার সময় মুমিনদের একটি দল যেন উপস্থিত থাকে।’ (সুরা নূর: ২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অবিবাহিত নারী ও অবিবাহিত পুরুষ ব্যভিচার করলে শাস্তি হলো একশত বেত্রাঘাত ও এক বছরেরর জন্য নির্বাসন আর বিবাহিত নারী বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে ব্যভিচার করলে শাস্তি একশত বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপে হত্যা।’ (মুসলিম: ১৬৯০) পরকালে এর শাস্তি সম্পর্কে হাদিসে এসেছে— ‘জিনাকারীরা উলঙ্গ অবস্থায় এমন এক চুলার মধ্যে থাকবে, যার অগ্রভাগ হবে অত্যন্ত সংকীর্ণ আর নিম্নভাগ হবে প্রশস্ত, তার তলদেশে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত থাকবে, তাদেরকে তাতে দগ্ধ করা হবে। তারা মাঝেমধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় পৌঁছে যাবে; অতঃপর আগুন যখন স্তমিত হয়ে যাবে তখন তাতে তারা আবার ফিরে যাবে। আর তাদের সঙ্গে এই আচরণ কেয়ামত পর্যন্ত করা হবে।’ (বুখারি: ৭০৪৭)
পরকীয়া প্রেম বা অন্যের বিবাহ বন্ধনে থাকা স্ত্রীর সঙ্গে প্রেম-প্রণয়ের মাধ্যমে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া আরও জঘন্য অপরাধ ও মহাপাপ। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করা।’ আমি বললাম, ‘এটা নিশ্চয়ই জঘন্যতম গুনাহ। তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘তোমার সন্তান তোমার সঙ্গে আহারে অংশ নেবে এ আশঙ্কায় তাকে হত্যা করা।’ আমি বললাম, ‘এরপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।’ (বুখারি: ৪৪৭৭; মুসলিম: ৮৬)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এই মন্দ পরিণতির মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখিরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হবে তা হচ্ছে : ১. তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে। ২. তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং ৩. তার দারিদ্র্য স্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখিরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে: ১. আল্লাহর অসন্তোষ, ২. কঠিন হিসাব ও ৩. জাহান্নামের শাস্তি।’ (বায়হাকি: ৫৬৪)
জিনা বা ব্যভিচার ইসলামসহ পৃথিবীর সকল ধর্মগ্রন্থে ঘৃণিত ও জঘন্য অপরাধ। সুতরাং ধর্ষণ-ব্যভিচারমুক্ত সমাজ গড়তে ধর্মীয় অনুশাসনই প্রধান রক্ষাকবচ।
সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে তার মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে; আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো।’ (বুখারি: ৬৪৭৪) আসুন, পরকীয়ামুক্ত জীবন গড়ি। কোরআন-হাদিস মেনে চলি ও দয়াময় আল্লাহর কাছে তওবা করে সুস্থ জীবনে ফিরে আসি।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ