ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৩, ২০ আশ্বিন ১৪৩০, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

সুখ তুমি কোথায়?

প্রকাশনার সময়: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৩১

* আমরা যখন একটি নতুন বাড়িতে উঠব, তখন আমি অনেক সুখী হব।

* একটা ডিগ্রি পেলেই আমি খুশি হব।

* আমি শুধু বিয়ে করার অপেক্ষায় আছি, বিয়ে করলেই আমার জীবন অনেক সুখের হবে।

* যদি আমার জীবনে এটা বা ওটা ঘটত, তবে আমি অনেক বেশি খুশি হতাম!

আমরা অনেক জায়গায় সুখ খুঁজি। প্রশ্ন হলো, আমরা যেখানে সুখ খুঁজছি সেগুলো কি সঠিক জায়গা? নাকি আমরা অযথা সময় নষ্ট করছি? আসুন আমরা কিছু সাধারণ বিষয় পর্যালোচনা করি, যেখানে আমরা ধরেই নিই সুখ অবধারিত।

টাকা-পয়সা: টাকা পয়সা কি আসলেই সুখ বয়ে আনে? বেতন বাড়লে কে না খুশি হয়? আমাদের বস যখন বলেন আমাদের বেতন বেড়েছে, তখন আমরা সবাই খুশি হয়। আমাদের খালা বা ফুফু যখন ঈদের কেনাকাটার জন্য আমাদের কিছু টাকা দেন তখনও আমরা খুশি হই। কিন্তু প্রশ্ন হলো টাকা কি স্থায়ী সুখ বয়ে আনে? এই সুখ আসলে কতদিন স্থায়ী হয়?

এই বিষয়ে খুব আকর্ষণীয় একটি গবেষণা করা হয়েছে। মনোবিজ্ঞানীরা এমন কয়েকজন লটারি বিজয়ীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, যারা ৫০০০০ থেকে ১ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত জিতেছেন। গবেষণায় উঠে এসেছে, পুরস্কারের অর্থ পাওয়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এসব লটারি বিজয়ীদের আনন্দের মাত্রা সাধারণ মানুষের চেয়েও কমে যায়।

প্রকৃতপক্ষে, তারা লটারি পাওয়ার আগে যে ক্রিয়াকলাপগুলো উপভোগ করত, যেমন টিভি দেখা বা দুপুরের খাবার খাওয়ার মতো সাধারণ আনন্দগুলো তারা এখন লটারি জেতার পরে কম উপভোগ করছে। প্রকৃতপক্ষে, যখন আমাদের বেতন বৃদ্ধি পায়, আমরা অল্প সময়ের জন্য একটি সুখ অনুভব করি, কিন্তু তারপর যখন আমরা এতে অভ্যস্ত হয়ে যাই, তখন আমরা পরবর্তী বৃদ্ধির জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করি। হাদিসে এসেছে— ‘যদি আদম সন্তানের সোনার একটি উপত্যকা হয়, তবুও সে চাইবে যে, তার কাছে দু’টি উপত্যকা হোক। (কবরের) মাটিই একমাত্র তার মুখ পূর্ণ করতে পারবে। আর যে তাওবা করে, আল্লাহ তাওবা গ্রহণ করেন।’ (ইবনে মাজাহ)

আরাম এবং বিলাসিতা: অর্ধ শতাব্দী আগে জীবন কেমন ছিল একবার কল্পনা করুন। আপনি যে দেশেরই হন না কেন, আপনি যদি এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করেন তবে আপনি দেখতে পাবেন যে আমাদের কাছে তখনকার মানুষের তুলনায় অনেক বেশি বিলাসিতার উপকরণ রয়েছে। আমাদের রয়েছে প্রবাহিত গরম এবং ঠান্ডা পানি, প্রতিটি বেডরুমের সঙ্গে সংযুক্ত একটি বাথরুম, এলইডি টিভি যেখানে আমরা একশত চ্যানেলের মধ্যে থেকে কোন চ্যানেলটি দেখব তা বেছে নিতে পারি, রয়েছে সারাদিন এবং রাতব্যাপী বিদ্যুৎ সরবরাহ। লোডশেডিং হলেও বিত্তবানদের জন্য রয়েছে জেনারেটর, আর কিছু না বলি, এভাবে তালিকা যে বাড়তেই থাকবে....

সিলিং ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ বা ওয়াশিং মেশিনের মতো যে জিনিসগুলো এখন আমাদের নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী, সেই জিনিসগুলোর কথা মানুষ কি কিছুকাল আগেও চিন্তা করতে পারত? কিন্তু আমরা কি আসলেই অতীতের মানুষের চেয়ে বেশি সুখী?

আসলে মানুষ এখন কম সুখী। বস্তুবাদ সুখ বয়ে আনে না, প্রকৃতপক্ষে, এটি অসুখী হওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী ভবিষ্যদ্বাণী। এর একটি কারণ হলো আমরা যখন অত্যাধুনিক আইফোন বা লেটেস্ট মডেলের গাড়ির পেছনে দৌড়াচ্ছি, যে কাজগুলো প্রকৃত সুখ হয়ে আনতে পারে তা থেকে আমরা অনেক দূরে সরে যাচ্ছি।

আল্লাহ তায়ালা বলছেন: ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে ভুলিয়ে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা কবরের সাক্ষাৎ করবে।’ (সুরা তাকাসুর: ১-২)

রূপ-সৌন্দর্য: আমরা টিভি বিজ্ঞাপনে দেখি কিভাবে একটি মেয়ে তার ব্রন বা কালো ত্বকের জন্য হতাশায় ভোগে, তারপর তাকে একটি ‘ম্যাজিক ক্রিম’ দেয়া হয় এবং সে খুশিতে নেচে ওঠে! এসব বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই বার্তাটি আপনার মস্তিষ্কে এমনভাবে গেঁথে যায় যে আপনার কাছে মনে হবে আপনি যত বেশি সুদর্শন হবেন, তত বেশি সুখী হবেন।

আসলে, আমাদের এই দুর্বলতাকে ঘিরেই পুরো ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে— বাজারে এমন সব ধরনের পণ্য রয়েছে যা আপনাকে সাদা, পাতলা, মোটা, মসৃণ করবে; ঘন, সোজা, কোঁকড়ানো কেশযুক্ত করবে। কিন্তু সৌন্দর্য কি আমাদের জন্য সত্যিকারের সুখ নিয়ে আসে?

স্নাতক শিক্ষার্থীদের ওপর করা একটি গবেষণায় প্রকাশিত হয় যে সুখী শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করে যে তারা বেশি সুন্দর, কিন্তু যখন বস্তুনিষ্ঠ বিচারকদের দ্বারা মূল্যায়ন করা হয়, তখন দেখা যায় যে কম সুখী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সৌন্দর্যের স্তরের তেমন কোনো পার্থক্য নেই।

বিয়েশাদি: বয়ঃসন্ধিকাল থেকে আমরা আমাদের জীবনসঙ্গীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। আমরা আমাদের হূদয়ে একটি ছবি তৈরি করি, কিভাবে আমরা তাকে খুঁজে পাব এবং কিভাবে আমরা বিয়ে করব এবং সুখে জীবনযাপন করব..... ইত্যাদি, ইত্যাদি।

আমরা সত্যিই আমাদের বিয়ের দিনটির জন্য অপেক্ষা করি, হয়তো খুব বেশিই অপেক্ষা করি। যখন অবশেষে আমরা বিয়ে করি, তখন আমরা উপলব্ধি করতে শুরু করি যে এটি ঠিক ‘হ্যাপিলি এভার আফটার’ নয়, যেমনটি আমরা গল্পের বই পড়ে এসেছি। আমাদের সুখের বুদ্বুদ ভেঙে যায় এবং আমরা নিজেদেরকে একটি এলোমেলো পরিস্থিতিতে খুঁজে পাই, যেখান থেকে আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেরিয়ে আসতে চাই।

আমাদের চারপাশে তালাকপ্রাপ্তদের সংখ্যা দেখুন। বিয়ে কোনো সুখের প্যাকেজ নয়, এটা একেবারেই নতুন একটি পরিস্থিতি, নতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন জীবন। একটি বিয়েকে সফল করে তুলতে অনেক সময় এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। বিয়ের আগে যদি আমাদের সঠিক মানসিকতা এবং সঠিক প্রত্যাশা থাকে, তাহলেই বৈবাহিক জীবনে ‘হ্যাপিলি এভার আফটার’ অর্থাৎ প্রশান্তি অর্জন করা সম্ভব, বিইজনিল্লাহ। তাই সুখের পেছনে না ছুটে আসুন, জীবনে সন্তুষ্ট থাকতে চেষ্টা করি।

understandQuran অবলম্বনে

নয়া শতাব্দী/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ