নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
সৃষ্টির পরতে পরতে আছে মহান আল্লাহর কুদরত আর নিয়ামতের দৃষ্টান্ত। মানুষের সাড়ে তিন হাত দেহে তিনি অসংখ্য নিয়ামত দিয়েছেন। তার মধ্যে প্রধান একটি নিয়ামত হলো চোখ। স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করা ও পরকালের প্রস্তুতির জন্য চোখের কোনো বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে চোখ হেফাজতের নির্বাচিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।
চোখ অশ্লীলতার প্রধান উৎস
মহান আল্লাহ চোখের সঠিক ব্যবহারের গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।’ (সুরা নুর: ৩০) এই আয়াতে চোখ ও যৌনাঙ্গ হেফাজতের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেননা চোখের দৃষ্টির লাগামহীনতা অধিকাংশ অশ্লীলতার প্রধান উৎস। নারীদের মধ্যে যৌনতার প্রতি প্রবল আকর্ষণ আছে।
তাই তাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।’ (সুরা নুর: ৩২) উপরোক্ত আয়াত দুটি থেকে বোঝা গেল চোখের লাগাম টেনে ধরা না হলে লজ্জাস্থান অনিবার্যভাবে নিয়ন্ত্রণ বর্ডারের বাইরে চলে যায়। সংঘটিত হয় বড় গোনাহ।
চোখের যে গোনাহ ক্ষমাযোগ্য
অধিকাংশ মানুষ গুনাহ করে চোখের মাধ্যমে। চোখ প্রথমে দেখে, আকাশ কুসুম কল্পনা করে তারপর পাপের দিকে পা বাড়ায়। তাই হাদিসে চোখ অবনত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উবাদা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত। নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের পক্ষ থেকে আমাকে ছয়টি জামানত দাও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জামিন হবো। ১. যখন তোমরা কথা বলবে সত্য বলবে। ২. যখন প্রতিশ্রুতি দেবে প্রতিশ্রুতি পালন করবে। ৩. যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখা হবে তা পরিশোধ করবে। ৪. নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করবে। ৫. নিজ দৃষ্টি অবনমিত রাখবে এবং ৬. নিজের দুই হাত আয়ত্বে রাখবে।’ (মুজামুল কাবির: ৮০১৮, মুসনাদে আহমদ: ২২৭৫৭)
সহিহ মুসলিমের ২১২১ নম্বর বর্ণনায় নবীজি (সা.) চক্ষু অবনত রাখাকে রাস্তার হক হিসেবে ঘোষণা করেছেন। রাস্তাঘাটে, বাজার-হাটে বেগানা নারীর প্রতি বা অযাচিত জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দেয়াকে চোখের জেনা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘চোখের জেনা হলো হারাম দৃষ্টি।’ (বুখারি: ৬৬১২)
অনিচ্ছাকৃত হঠাৎ দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে আলী (রা.) রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে আলী! অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টি পড়ে গেলে পুনরায় তুমি দৃষ্টি দিও না। কেননা প্রথম দৃষ্টি তোমার জন্য ক্ষমাযোগ্য কিন্তু পুনরায় দৃষ্টিপাত করা তোমার জন্য ক্ষমাযোগ্য নয়।’ (তিরমিজি: ২৭৭৭)
চোখের সঠিক ব্যবহার
চোখ দিয়ে বৈধ জিনিস দেখা। বৈধ কাজ করা, বৈধ সকল ক্ষেত্রে ব্যবহার করাই চোখের নিয়ামতের হক আদায় করা। এটার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। অনেক নেকি দান করেন। যেমন কেউ যদি মুহাব্বতের দৃষ্টিতে পিতা-মাতার দিকে তাকায় তাহলে মাকবুল হজ্জ ও ওমরার সওয়াব পাবে।
এ সম্পর্কে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো অনুগত সন্তান পিতামাতার প্রতি অনুগ্রহের নজরে দৃষ্টিপাত করে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন।’ (বায়হাকি: ২৬৫) কেউ যদি কোরআন স্পর্শ করে দেখে দেখে তিলাওয়াত করে তবে সে দ্বিগুণ সওয়াব পাবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোরআন তিলাওয়াতে পারদর্শী ব্যক্তিরা সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গে থাকবে। আর যারা আটকিয়ে কষ্ট করে কোরআন তিলাওয়াত করে তারা দ্বিগুণ সওয়াব লাভ করবে।’ (মুসলিম: ১৮৯৮)
চোখ হেফাজতের পুরস্কার
মহান আল্লাহ চোখ হেফাজতের পুরস্কার দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানে প্রদান করবেন। দুনিয়াতে চোখ হেফাজতের পুরস্কার সম্পর্কে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার দৃষ্টি কোনো স্ত্রী লোকের সৌন্দর্যের প্রতি প্রথমে পতিত হয় অতঃপর দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে তাকে এমন ঈমান দান করবেন যার মজা বা স্বাদ তার অন্তরে উপভোগ করবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২২২৭৮)
হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন তুমি আল্লাহর জন্য কোনো কিছু বিসর্জন দেবে, আল্লাহ তায়ালা এর চাইতে উত্তম বিনিময় দান করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৭৭৬)
চোখ হেফাজতের পরকালীন পুরস্কার হলো কেয়ামতের ভয়াবহ দিনে ক্রন্দন থেকে মুক্তি লাভ করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন প্রতিটি চোখ ক্রন্দন করবে। একমাত্র ওই চোখ ব্যতিত যে হারাম থেকে নিজের দৃষ্টিকে হেফাজতে রেখেছে, যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দিয়েছে এবং যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে।’ (সুনানে দারেমি: ২/২৬৭)
চোখের পাপ থেকে বাঁচার উপায়
কেয়ামতের দিন মানুষের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার আমলের সাক্ষ্য দেবে। কারণ তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসিত হবেন। কোরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই কান, চোখ এবং অন্তর এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৩৬)
কেয়ামতে এসবের সাক্ষ্য থেকে আত্মরক্ষার পথ হলো হিম্মত করা। চোখের অপব্যবহার না করার নিয়ত করা। হাকীমুল উম্মাত থানভী (রহ.) বলেন, ‘হিম্মতের সঙ্গে জীবনযাপন করুন। যদিও নফসের কষ্ট হবে। কিন্তু এই কষ্ট জাহান্নামের আগুনের কষ্টের চেয়ে কম।’
চোখের পাপ থেকে বাঁচতে অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা আবশ্যক। খারাপ কিছু চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাওবা-ইস্তিগফার করা। সর্বোপরি পূর্ণ একনিষ্ঠতার সঙ্গে নামাজ আদায় করা। কারণ কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল, গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত: ৪৫)
ইন্টারনেটের অপব্যবহার বন্ধ করাও চোখ হেফাজতের বড় একটি মাধ্যম। কেননা চোখ কন্ট্রোল করা হলে অন্যান্য পাপের ঝোঁক কমে যায়।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ