নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
হজের প্রতিদান কেমন হবে? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা এর বিনিময়ে আমাদের কী পুরস্কার দিবেন? চলুন জেনে আসি!
১. জান্নাত প্রাপ্তি
আবু হুরায়রা রাদ্বি’আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘এক উমরা অন্য উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সকল গুনাহকে মুছে দেয়। আর মাবরূর হজের একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত।’ (সহিহ বুখারী, হাদিস: ১৬৮৩ )
কেবল ৫ দিনের বিষয়! এই ৫টি দিন যদি আপনি হজের ফিক্বাহ অনুযায়ী সবকিছু সঠিকভাবে পালন করেন, হজের করণীয় ব্যতীত অন্য কাজে লিপ্ত না হন এবং কী করছেন কেন করছেন তা উপলব্ধি করে সমস্ত আচারবিধি সমাপ্ত করতে পারলে বিনিময়ে আপনাকে জান্নাত দিয়ে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ।
২. জিহাদের সমান সওয়াব
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা দেখছি জিহাদ সর্বোত্তম আমল। আমরাও জিহাদে যেতে চাই। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘(তোমাদের জন্য) সর্বোত্তম জিহাদ হলো হজে মাবরুর।’ (সহিহ বুখারী, হাদিস: ১৫২০) কতোই না উত্তম ফজিলত!
৩. পূর্বের সমস্ত গুনাহ থেকে মুক্তি
আমর ইবনুল আস রাদ্বি’আল্লাহু আনহু! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন সাহাবি। তিনি যখন শয্যাশায়ী। তার পুত্র বললেন, ‘আপনি একজন মুমিন। যেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) আপনাকে এই সুসংবাদ দিয়েছেন সেখানে আপনি মৃত্যুর পূর্বে এভাবে কান্নাকাটি করছেন কেন?’
তিনি দেয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে ছিলেন। এ কথা শুনে পুত্রের দিকে মুখ ফিরিয়ে তিনি বললেন, আমি নিজেকে তিনটি অবস্থায় পেয়েছি।
এমন একটা সময় ছিল, যখন আমি আল্লাহর রাসুল (সা.) ব্যতীত আর কারো প্রতি অধিক রাগান্বিত, ক্রোধান্বিত ছিলাম না। আমার অন্তরে তার ওপর ক্ষমতাশালী হয়ে তাকে শেষ করে ফেলার যে সুতীব্র ইচ্ছে, তা চেপে বসেছিল, এবং এটিই আমি সবচেয়ে বেশি করে চাইতাম। ঘুমে জাগরণে আমি সর্বদা শুধু এই-ই ভাবতাম।
কিন্তু এরপর আল্লাহ তায়ালা আমার অন্তরে ইসলামের প্রতি ভালোবাসা ঢেলে দেন। আমি নবীজির কাছে গিয়ে বললাম, ‘হে মুহাম্মাদ, আমি মুসলিম হতে চাই! আপনার হাত বাড়িয়ে দিন, আমি আপনার কাছে বাইয়াত দিব।’
কিন্তু মুহাম্মাদ (সা.) যখন হাত সামনের দিকে বাড়ালেন তখন আমি আমার হাত গুটিয়ে নিলাম। নবীজি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হয়েছে?’
-আমার একটি শর্ত আছে।
-কী শর্ত?
-আমাকে ক্ষমা করে দেয়া হোক, এটাই আমার শর্ত।
আমর ইবনুল আস (রা.) জানতেন যে, তিনি অতীতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যা যা করেছিলেন তা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই তিনি নিশ্চিত হতে চাইছিলেন যেন নবীজি (সা.) তাঁকে তাঁর অতীতের কার্যকলাপের জন্য পাকড়াও না করেন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘ও ওমর, তুমি কি জানো না যে, ইসলাম তার আগের সমস্ত গুনাহ মুছে দেয়, হিজরত তার আগের সমস্ত গুনাহ মুছে দেয় এবং হজ তার আগের সমস্ত গুনাহ মুছে দেয়?’
অর্থাৎ, আপনি ঈমান আনার পূর্বে যদি পাহাড়সম গুনাহও করে থাকেন, এমন যে লেলিহান আগুনের শিখায় আজীবন জ্বলবার মতো পাপ আপনি করে ফেলেছেন, তবুও ঈমান আনার পর ঈমান হয়ে যাবে এর কাফফারা স্বরূপ। সমস্ত গুনাহের কালিমা শুধু সে মুছে দিবে না, বরং ধ্বংস করে দেবে। একই কথা হজ এবং হিজরতের ক্ষেত্রেও।
তখন থেকে মুহাম্মাদের চেয়ে অন্য কোনো ব্যক্তি আমার কাছে অধিক প্রিয় ছিল না। অথচ তিনিই কিনা একসময় আমার ঘোরতর শত্রু ছিলেন। তাঁর প্রতি আমার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধাবোধ এতটাই তীব্র ছিল যে, আমি কখনো তাঁর দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারিনি। কেউ যদি আমাকে তাঁর দৈহিক বর্ণনা করার জন্য অনুরোধ করত তাহলে আমার পক্ষে তাও সম্ভব হতো না। আমি যদি সে সময় মারা যেতাম তাহলে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশা করতে পারতাম...।’
কিন্তু এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেলেন। এখন আমার জীবনের তৃতীয় পর্যায় চলছে। জানিনা এখন আমি কোন অবস্থায় আছি! (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১২১ )
অর্থাৎ, আপনি হজ আদায় করতে গেলেন, স্ত্রীর সঙ্গ থেকে দূরে থাকলেন এবং কোন ফাসেকি কাজ করা থেকে বিরত থাকলেন, তাহলে আল্লাহ আপনাকে এ পুরস্কার দিবেন। ফাসেকি কাজ এসেছে ‘ফিসক’ শব্দ থেকে? তা কি? ফিসক হচ্ছে এমন কাজ, যা আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখার বহির্ভূত। এমন অবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি হজ আদায় করতে পারেন, তবে তাকে হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদ্যোজাত শিশুর সাথে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ নিষ্পাপ, মাসুম এক বান্দা হয়ে সে নিজের জীবন শুরু করবে।
৪. সর্বশেষ ফজিলত হচ্ছে- দোয়া কবুল হওয়া
হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘হজ ও উমরা পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান। তারা দোয়া করলে তা কবুল হয়ে যায় এবং গুনাহ মাফ চাইলে তা মাফ করে দেয়া হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ২৮৯২)
পুরো মুসলিম জাতির পক্ষ থেকে হাজীগণ আল্লাহর কাছে প্রতিনিধি হিসেবে সুযোগ পান তাঁর ঘর পরিদর্শন করার। এবং তাদের যেকোনো দোয়া কবুলের নিশ্চয়তা আল্লাহ দিয়েছেন!
অনুবাদ : সাবিহা সাবা
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ