নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
পাবনার ঈশ্বরদীর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে খানমান। অঞ্চল ভেদে এই সবজির নাম ভিন্ন ভিন্ন। যেমন উত্তরাঞ্চলবাসী চামঘাস এবং দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এটাকে বলে ঘ্যাত্তর। কেউ কেউ আবার ঘেট কচু, ঘের কচু বলে।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত নয়টার দিকে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী রকেট ট্রেন থামে। যাত্রী উঠানামার সাথে সাথে লক্ষ্য করা যায় কয়েকজন শ্রমিক খানমান মাথায় নিয়ে ট্রেনে উঠেছেন।
গোপালগঞ্জ, যশোর, পাবনার চাটমোহর এবং ঈশ্বরদীর ব্লাকপাড়ার বাসিন্দা শ্রমিকরা। এক বছর থেকে পাঁচ বছর ধরে ঈশ্বরদী থেকে এ খানমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে পাইকারি ও খুচরায় বিক্রি করেন। তবে যশোর, নোওয়াপাড়া, মোবারকগঞ্জে এই খানমানের চাহিদা বেশি। প্রতি মুঠি খানমান ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হয়। এতেই তাদের ডাল-ভাতের ব্যবস্থা হয়ে থাকে।
জানা গেছে, প্রথম দেখতে অনেকটা কচু পাতার মতো হলেও এটি আসলে খানমান হিসেবেই বেশি পরিচিত। সারাবছর খুব সামান্য পাওয়া গেলেও বৈশাখ থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত অনাবাদি বা বসতবাড়িরসহ রাস্তার আশপাশের পরিত্যক্ত জমিতে এর দেখা মেলে প্রচুর।
খানমান গাছের কাণ্ডসহ পাতা সিদ্ধ করে কালোজিরা, রসুন, সরিষার তেল আর শুকনো মরিচ দিয়ে ভর্তা করে খেলেই বেশি সুস্বাদু লাগে। কেউ কেউ আবার এগুলোকে ঔষধি সবজি হিসেবেও খেয়ে থাকেন।
হাওড় বা ডোবা অঞ্চল না হওয়ায় ঈশ্বরদীর উপজেলাজুড়ে খানমান শ্রমিকদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায় বছরের এই সময়গুলোতে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা খানমান শ্রমিকরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করা খানমানগুলোকে নিয়ে হাজির হন ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন এলাকায়। আগাছা পরিষ্কার করে আটি বাঁধে। সেখানেই আগাছা মুক্ত খানমান পাতাসহ কাণ্ডের আকার ভেদে মুঠি করে বাঁধে। পরে সেই খানমান রাতে ট্রেনযোগে চাহিদা অনুযায়ী পাঠানো হয় দেশের উত্তর ও দক্ষিনাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
খানমান শ্রমিক মো. শামিন আলী বলেন, দেশের উত্তর এবং দাক্ষিণাঞ্চলে এই খানমানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদা মেটাতে আমরা ছয়মাস খানমান সংগ্রহ করার জন্য ঈশ্বরদীতে চলে আসি। গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে একবেলা এগুলো সংগ্রহ করে রাতের ট্রেনে সেগুলো পাঠিয়ে দেই। সেখানে আঁটি ভেদে ১০ টাকা হারে নগদে পাইকাররা কিনে নেন। মাঝে মাঝে পাইকাররা এখানে এসেও কিনে নিয়ে যায়।
খানমান শ্রমিক রাব্বি জানান, বর্ষার সময় আমাদের অঞ্চল পানিতে ডুবে যায়। এ সময় আমাদের সব কাজ শেষ হয়ে যায় বলে আমরা প্রতিবছরই ঈশ্বরদীতে আসি খানমান তুলতে। বিভিন্ন অঞ্চলে এর ভালো চাহিদা থাকায় আমরা ভালো আয় করতে পারি খানমান বিক্রি করে।
ঈশ্বরদী স্টেশনের কুলি আতাবুল জানান, বেশ কয়েক বছর থেকেই এ সময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খানমান উঠিয়ে এনে স্টেশন এলাকায় ফাঁকা রেললাইনের পাশে বসে আগাছা পরিষ্কার করে মুঠি বাঁধে। পরে সেই মুঠি বাঁধা খানমান দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বিক্রি করে।
নয়া শতাব্দী/এসএ/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ