নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
আপনি যদি একজন ফ্যাশনিস্তা নারী হন, তাহলে মনে করে বলুন তো সর্বশেষ কবে আকর্ষণীয় স্টিলেটো পরে হেঁটেছেন?
ভিক্টোরীয়–উত্তর (১৮৩৭-১৯০১) যুগে হাই হিলের জনপ্রিয়তা এমন বেড়ে যায় যে একসময় আভিজাত্য আর নারীত্বের প্রায় সমার্থক হয়ে ওঠে এই জুতা। মহামারিকালের আগে পর্যন্তও হাই হিলের এই বিশেষ কদর ছিল। কেবল পায়ে পরার জুতা বা ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবেই নয়, বরং আত্মবিশ্বাস, মর্যাদা আর সবার ভেতর নিজেকে মোহনীয়ভাবে উপস্থাপনের একটা উপায় হিসেবেও এটিকে দেখা হতো।
দেড়শ বছর ধরে ফ্যাশনপ্রেমী নারীদের মধ্যে হাই হিলের জনপ্রিয়তায় ভাটা না পরার কারণ জানিয়ে ‘দ্য সাইকোলজি অব ফ্যাশন’ বইয়ের লেখক ড. ক্যারোলিন মেয়ার সিএনএনকে বলেন, ‘হাই হিল শরীরের অঙ্গভঙ্গি বদলে দেয়। এই জুতা পরলে আপনাকে বিশেষ একটা পদ্ধতিতেই হাঁটতে হবে। আর সেটা আশপাশের মানুষদের থেকে আপনাকে আলাদা করে ফেলবে, আপনি হয়ে উঠবেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এটা গ্ল্যামার, আত্মবিশ্বাস আর পেশাদার মনোভাবের জন্ম দেয়।’
বিয়ে হোক বা অন্য কোনো আড্ডা-আয়োজন—যেকোনো পোশাকের সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে যেত হাই হিল। এমনকি বেড়াতে গেলেও যা কিছু সঙ্গে যেত, সেসবের ভেতরে থাকত অন্তত এক জোড়া হাই হিল। হাই হিল ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বহু গবেষণার ফল প্রকাশিত হওয়ার পরও এই ধরনের জুতার বাজারে তা কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে মহামারিকালের দুই বছরে হাই হিলের বাজার পড়ে গেছে।
এই নিয়ে ‘তবে কি আমরা হাই হিলকে বিদায় বলে দিয়েছি?’ শিরোনামে একটি বিশেষ ফিচার প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন। সেখানে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এনপিডি গ্রুপের হিসাবে ২০২০ সালের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে হাই হিল কেনার হার কমেছে ৬৫ শতাংশ।
কেন এমন হলো, সেই প্রশ্নের উত্তরে ক্যারোলিন মেয়ার বলেন, মহামারিকালের পর মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে নিজের স্বাস্থ্য আর স্বাচ্ছন্দ্য, যে দুটোর কোনোটার সঙ্গেই হাই হিলের যোগ নেই। তা ছাড়া মানুষ এখন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অংশ হিসেবে হাঁটার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকে হেঁটেই অফিসে যাচ্ছেন, আসছেন। এসব ক্ষেত্রেও আর হাই হিল পায়ে পরার সুযোগ নেই।
ফ্যাশনে যে নতুন ঢেউ চলছে, সেটার শিরোনাম ‘সবার ওপরে আরাম’ (কমফোর্ট ওভার এভরিথিং)। এখন অফিসে বা পার্টিতেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ক্যাজুয়াল পোশাক–পরিচ্ছদ। তাই হাই হিলের বিক্রি যেখানে কমেছে, স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে স্নিকার, লোফার, ব্লক হিল, লো হিল, ফ্লিপ ফ্লপ, প্ল্যাটফর্ম জুতার বিক্রি। ২০২৩ সালের কেবল প্রথম তিন মাসেই অ্যাডিডাসের স্পোর্টস শুর বিক্রি বেড়ে গেছে ১৪৩ শতাংশ। প্রাডা, বালমেইন, মিউ মিউ, বারবেরি, ভ্যালেন্তিনোর মতো ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো মনোযোগী হয়েছে ফ্ল্যাট আর লো হিলের আরামদায়ক স্যান্ডেল তৈরির দিকে।
তবে এসব সত্ত্বেও এখনো নারীরা রেড কার্পেট, ফ্যাশন শো, পার্টি বা বিয়ের অনুষ্ঠানে কেতাদুরস্ত অনুষঙ্গ হিসেবে হাই হিল পরছেন।
সূত্র : সিএনএন
নয়াশতাব্দী/এমটি
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ