ঢাকা, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০, ৮ জিলকদ ১৪৪৪

নারীর জন্য শোভন ও নিরাপদ হোক গণপরিবহন

প্রকাশনার সময়: ২০ মে ২০২৩, ১৪:২৬
ছবি - সংগৃহীত

সকাল ১০টায় অফিস। যথাসময়ে অফিসে পৌঁছাতে ঘর ছাড়তে হয় ৭ টায়। তার ওপর ঠেলাঠেলি করে ওঠানামা, বাসের ভেতর নানা চরিত্রের উপস্থিতি আর জ্যাম তো জীবনেরই অংশ হয়ে গেছে এখন। এগুলো উপেক্ষা করলে জীবন চলে না। এই শহরের বাসগুলোয় ওঠা মাঝেমধ্যে বেশ যন্ত্রণাদায়ক হয়ে পড়ে। দৌড়াতে দৌড়াতে উঠতে হয় আর উঠে বসার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তার ওপর ‘এই আপা ভেতরে যান, এদিকে সরেন, সাইটে দাঁড়ান’ যন্ত্রণা তো আছেই।

কোনো কোনো দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠা যায় না। আবার অতিরিক্ত পুরুষ যাত্রী থাকলে বাস নিতেও চায় না। কর্মজীবী নারীদের কাছে এটা নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার। অফিস ছুটির পর বাসে উঠতে অন্তত আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় বা অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সিএনজি, রিকশায় যাতায়াত করতে হয়।

বর্তমানে দেশের নারীদের বিশেষ করে কর্মজীবী নারীদের আরেক ভোগান্তির নাম গণপরিবহন। নারীদের জন্য দিন দিন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে গণপরিবহনে যাতায়াত। ব্যস্ত জীবনে বিভিন্ন কাজে নারীদের প্রতিনিয়ত ঘরের বাইরে বেরোতে হয়। আর বাইরে বেরুলেই তাদের শিকার হতে হয় গণপরিবহনের চরম ভোগান্তি। সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা অন্য কোনো বাহনে বেশি ভাড়া ব্যয় করতে নাভিশ্বাস উঠে মধ্যবিত্ত কর্মজীবী নারীদের। যার কারণে বাধ্য হয়ে গণপরিবহনে যেতে হয়।

রাজধানীতে পরিবহন ভোগান্তির শিকার হয়নি এমন নারী খুঁজে পাওয়া মুশকিলের ব্যাপারই বটে। বিশেষ করে ভোগান্তিতে পড়তে হয় মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির নারীদের, যাদের চলাচলের একমাত্র নির্ভরতা গণপরিবহন।

গণপরিবহন মানেই হচ্ছে পুরুষ, নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের পরিবহন। অথচ এই গণপরিবহনে নারীরা নানা দুর্ভোগ পোহায়। সকাল-সন্ধ্যা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নারী যাত্রীদের বাসে তুলতে চান না পরিবহন কর্মচারীরা। আগে কিছু কিছু বাসে ‘মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত’ কথাটি লেখা থাকত। বর্তমানে আর দেখা যায় না। নারীরা যে অফিস-আদালতে কর্ম করে, তাদেরও সময়মতো অফিসে যেতে হয়, এসব বিষয় গণপরিবহনের স্টাফরা মানতে চায় না।

আর যদি কোনো রকমে ভিড় ঠেলে বাসে উঠতে পারলেও নারীদের জন্য বরাদ্দ থাকে ইঞ্জিনের পাশের আসনটি, যেখানে ইঞ্জিনের তাপে বসে থাকা কষ্টসাধ্য। বাসের হেলপারদের ইচ্ছে হলে নারীদের যাত্রী হিসেবে তুললেও বাসে ওঠানোর সময় কৌশল করে নারী যাত্রীটির সঙ্গে অশোভন আচরণ করে বসে। তবু নারীরা তাৎক্ষণিক কোনোরূপ প্রতিবাদমুখর হয় না। তা ছাড়া প্রতিবাদ করেও কেউ ভ্রুক্ষেপ করে না। এমন অসহনীয় ভোগান্তির ভেতর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মস্থলেসহ বিভিন্ন কর্মে যাতায়াত করছে নারীরা।

নারীদের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের একটি প্রস্তাব আনলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিসি) সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিটি বড় বাসে নয়টি এবং মিনিবাসে ছয়টি আসন মহিলা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। সংরক্ষিত আসনগুলো হবে চালকের পশ্চাতে। এটাকে চলাচলের অনুমতির (রুট পারমিট) অন্যতম শর্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তা কার্যকর হয়নি। এছাড়াও মহিলাদের জন্য আলাদা বাস নামালেও তা সংখ্যায় খুবই কম। যা পাওয়া সোনার হরিণ পাওয়ার মতো।

সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা যায়, গণপরিবহনে শতকরা ৪১ ভাগ নারী যৌন হয়রানির শিকার। কর্মস্থলে ও নানা কাজের ও বিষয়ের প্রয়োজনীতায় এখন নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে অতীতের তুলনায় বেশি। পাশাপাশি সমান তালে তার নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা বা বাহন বাড়েনি। দেশ রাষ্ট্রসমাজের সবক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নিরাপদ বিড়ম্বনাহীন যাতায়াত ব্যবস্থা বা বাহন নিশ্চিত না হলে নারী উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।

নয়া শতাব্দী/এসএম/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ