নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
প্রতিবছরই বেকারত্ব দূর করে সংসারে সুখ আনতে মাতৃভূমি ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন কয়েক লাখ বাংলাদেশি। কিন্তু তাদের কতজন কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাচ্ছেন? ৯০ দশকের শুরুতে কাজের সন্ধানে মিশর আসা শুরু করেন বাংলাদেশীরা। ১৯৯৪ সালে ৭৫ জন বাংলাদেশি ডলফিন নামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতে আসেন বিশ্বের প্রথম সভ্যতার এই মিশরে। ৭৫ গ্রুপ নামে পরিচিত সেই প্রবাসীদের হাত ধরেই দেশটির রাজধানী কায়রোসহ বিভিন্ন শহরে মিশর, ইন্ডিয়া ও শ্রীলঙ্কার মালিকাধীন পোশাক শিল্প কারখানায় কাজ করতে আসেন হাজার হাজার বাংলাদেশি।
২০১১ সালের আরব বসন্ত বিপ্লবের আগে ৫০ হাজারের অধিক বাংলাদেশি প্রবাসী কাজ করতো মিশরে। বিপ্লবের পর মিশরকে পূর্ণঘটন করতে ও বিভিন্ন কারণে বিদেশি শ্রমিকদের নিরুৎসাহিত করে মিশর সরকার। বর্তমান মিশরে বৈধ অবৈধ মিলে প্রায় ১৫ হাজার বাংলাদেশি পোশাক শিল্প শ্রমিক রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেরই ভাগ্য বদল হয়েছে, সংসারে সুখ এসেছে তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে। আবার আদম দালালদের প্ররোচনায় মিশর থেকে লিবিয়া হয়ে ইউরোপ পাড়ি দেওয়ার চেষ্টায় সর্বস্ব হারানো মানুষের কান্নাও ভেসে আসে গণমাধ্যমে।
পোশাক শিল্পে শ্রমিক এর কাজ নিয়ে মিশর এসে যে দু-একজন সফলতার শিখরে পৌঁছেছেন তাদের মধ্যে প্রবাসী মুজিবুর ইসলাম একজন। বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর গ্রামের আব্দুল আলি বাঘার ছেলে মুজিবুর হরিনাথপুর মেমানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে এস এস সি পাস করে ২০০২ সালে নীল নদ আর পিড়ামিডের দেশ মিশরে পাড়ি জমান একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক এর কাজ নিয়ে।
প্রায় এক দশক সময় ধরে মিশরের বিভিন্ন শহরে তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করার পর নিজস্ব অর্থায়ন ও স্বল্প পরিসরে কায়রোতে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা মার্গ ইল গেদিদ এ গড়ে তুলেন রহমান এপারেল্স নামের একটি পোশাক শিল্প কারখানা। শুরুটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হলেও দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে ভাগ্যের চাকা খুলেছে ইসলামের।
মজিবুর ইসলাম বলেন, ২০০২সালে আমি পোশাক শিল্পে শ্রমিক এর কাজ নিয়ে মিশর আসি। অনেক চড়াই উতরাই এর পর ২০১০ সালে কয়েকটি সেলাই মেশিন নিয়ে ছোট পরিসরে কাজ শুরু করি। আমার কারখানায় উৎপাদিত পোশাক মিশরের অভ্যন্তরীণ বাজারেই বিক্রি করি। আমার কারখানার ভাইয়ার আমি নিজেই। বর্তমানে আমার কারখানায় ৬০থেকে ৭০জন প্রবাসী বাংলাদেশি সহ মিশর ও অন্যান্য দেশের ২শতাধিক শ্রমিক কাজ করে।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রশংসা করে তিনি আরো বলে, মিশরে ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা না থাকলে আমি আমার কারখানায় কোন বিদেশী রাখতাম না। কারণ, বাংলাদেশি ভাইদের দিয়ে যদি আমার কারখানা চালাতে পারতাম তাহলে তাদের দেওয়া সমস্ত মুজুরিই রেমিট্যান্স হয়ে দেশে যেত।
মজিবুর ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মিশরে বাংলাদেশের কোন ব্যাংকের শাখা না থাকায় আমার এখানে যারা কর্মজীবী আছেন দেশে তাদের পরিবারের কাছে সরাসরি টাকা পাঠাতে পারেন না। হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে হয় এবং অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। টাকার রেইট কম দেয় এমনকি অনেক সময় ডলার দেওয়ার পরেও প্রবাসীদের পরিবারের কাছে টাকা পৌঁছে না। মিশরে বাংলাদেশি যে কোন একটি বানিজ্যিক ব্যাংকের শাখা খোলার জোর দাবি জানান মুজিবুর ইসলাম। তিনি বলেন, বর্তমানে তার মাসিক আয় ৮থেকে ১০ লক্ষ টাকা। স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে বসবাস করেন ইল মার্গ এলাকায়।
একমাত্র মেয়ে নাজিয়া রহমান বিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া লেখা করে গত ২৪শে ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে বিয়ে করেন নিউইয়র্ককে বসবাসরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক মরহুম খোরশেদ আলমের ছেলে জাহিদ হাসানকে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ