ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৩, ২০ আশ্বিন ১৪৩০, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

এক দিনেই ঘুরে আসুন বরিশালের সেরা ৪টি দর্শনীয় স্থান

প্রকাশনার সময়: ২০ আগস্ট ২০২৩, ১৫:৪৮ | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৩, ১৫:৫১

বাংলাদেশের মানুষ দিন দিন ভ্রমণের প্রতি উৎসাহিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে অনেক ভ্রমণ গ্রুপ। অবশ্য এসব গ্রুপের ভ্রমণ কার্যক্রম সাধারণত পরিচালনা করা হয় সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার। পত্রিকায় চাকরি করায় আমার সাপ্তাহিক ছুটি মঙ্গলবার। তাই এই গ্রুপগুলোর সঙ্গে আমার কখনও যাওয়া হয়নি। ১৫ আগস্ট সরকারি ছুটি থাকায় একটি ভ্রমণ গ্রুপ বরিশাল ইভেন্টের আয়োজন করেছে। দিনটি মঙ্গলবার হওয়ায় আমরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছি। এবার আমাদের গন্তব্য বরিশালের ভিমরুলি পেয়ারা বাজার। ধান, নদী, খাল- এই তিনে বরিশাল। বর্ষাকালে নদী-খালে ভরপুর পানি থাকে। তাই এ ঋতুতেই বরিশাল ভ্রমণ উপযুক্ত সময়। সফরসঙ্গী হিসেবে ছিল খালাতো ভাই ইব্রাহিম মিঠু। রাত ১১টায় আমরা বের হলাম। গ্রুপের বাসটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে ছেড়েছে।

রাতের খাবার খেয়ে আমরা গুলিস্তানের উদ্দেশে একটি রিকশা ভাড়া করলাম। রাত ১২টায় গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে আমরা ভ্রমণ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হলাম। পথে আরও কিছু ভ্রমণপ্রিয় পর্যটক নিয়ে বাসটি সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে আমাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে এগোতে থাকল। আসল আনন্দটা শুরু হলো যখন আমরা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশ করলাম। গানের তালে তালে বাসটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন সড়ক অতিক্রম করছে। আগে অনেকবার এ রাস্তা দিয়ে গেলেও মনের আনন্দের একটুও কমতি ছিল না। পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা মোড় পর্যন্ত বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ছাপ দৃশ্যমান। যার অন্যতম হলো, প্রমত্তা পদ্মার বুকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ভাঙ্গা মোড়ের পাশে দাঁড়িয়ে সবাই চা পানি খেয়ে নিলাম। এরপর বরিশাল সড়কে প্রবেশ করলাম। আমাদের প্রথম গন্তব্যস্থল গুঠিয়া মসজিদ। আমরা যখন গুঠিয়া মসজিদের সামনে পৌঁছালাম, তখন ফজরের নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার আধাঘণ্টা বাকি ছিল। সেখানে বাসের মধ্যেই হঠাৎ দেখা হয়ে যায় সাবেক সহকর্মী হাবিব ওয়াহিদের সঙ্গে।

গুঠিয়া মসজিদ

অপার সৌন্দর্যের নিদর্শন বরিশালের বিখ্যাত বায়তুল আমান জামে মসজিদ, যা অনেকের কাছে ‘গুঠিয়া মসজিদ’ নামেও পরিচিত। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম এ জামে মসজিদ বরিশালের উজিরপুর থানার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাংগুরিয়া গ্রামে অবস্থিত। এর পুরো কাঠামোতে মক্কা, জেদ্দা, মদিনা, বাগদাদ ও আজমিরের মাটি ও জমজম কূপের পানি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রায় ১৯৩ ফুট উচ্চতার মিনার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে মার্বেল পাথর। এই মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি কবরস্থান, একটি ঈদগাহ, তিনটি লেক, একটি মাদ্রাসা এবং একটি এতিমখানাও রয়েছে।

আজানের পর সবাই মসজিদ এরিয়াতে প্রবেশ করলাম। এরপর একটু হাঁটাহাঁটি করে ফজরের নামাজ আদায় করলাম। নামাজের পড়ে সবাই গ্রুপ ছবি তুললাম আর যে যার মতো ঘুরে দেখলাম পুরা কমপ্লেক্স এরিয়া। কমপ্লেক্স থেকে বের হয়ে আমরা ভিমরুলি পেয়ারা বাজারের উদ্দেশে রওনা দিলাম। সকাল সকাল হালকা বৃষ্টিতে অসাধারণ একটি পরিবেশ সৃষ্টি হলো। সকাল ৭টায় আমরা পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি বাসস্টেশনে নামলাম। সেখানে স্থানীয় একটি হোটেলে সকালের নাশতা সেরে আমরা গেলাম সন্ধ্যা নদীর তীরে। এখানে গ্রুপের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে রাখা হয়েছিল। একে একে সবাই নৌকাতে উঠলাম।

শান্ত-মনোরম পরিবেশে আমাদের নৌকা ঝালকাঠির ভিমরুলি পেয়ারা বাজারের উদ্দেশে যাত্রা করল। গান-গল্পে আমরা সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। আশপাশের মনোরম দৃশ্যে আমাদের চোখ জুড়িয়ে গেল। বিশেষত নদীর পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা দেখতে থাকলাম। সবচেয়ে মুগ্ধ করেছে ওই অঞ্চলের বড় বড় আমড়ার বাগান। এক একটি বাগানে কয়েক হাজার আমড়া গাছ আছে। বরিশালের আমড়া স্বাদের জন্য সারাদেশে প্রশংসিত।

ভিমরুলির ভাসমান পেয়ারা বাজার ইতালির ভেনিসের রিও সান বার্নাবা বাজার বা থাইল্যান্ডের ড্যামনোয়েন সাদুয়াক বাজার নয়। এখানে বলা হচ্ছে বাংলার ভেনিস খ্যাত ভাসমান পেয়ারা হাটকে। ঝালকাঠি জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভাসমান এ বাজারে পেয়ারার মৌসুমে সর্বোচ্চ বেচাকেনা হয়। ছোট খালজুড়ে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাজার চলে সপ্তাহের প্রতিদিন। বাজারের আশপাশে প্রতিটি বাড়িতে একটি করে ডিঙ্গি নৌকা থাকে।

আশপাশের এই দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা সকাল ৯টায় ভিমরুলি পেয়ারা বাজার গিয়ে পৌঁছালাম। একেকটি নৌকায় পেয়ারা আসছে আর পাইকাররা কিনে নিচ্ছেন। আহ! কি মনোরম দৃশ্য। সেখানে ঘণ্টাদুয়েক থেকে ফিরে আসার জন্য আবার নৌকায় উঠলাম। আসার পথে আমরা পেয়ারা বাগান পরিদর্শনে গেলাম। ৩১ হাজার একর জমিতে বিস্তৃত এই পেয়ারা বাগানের ওপর নির্ভরশীল বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের ২৬টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার পরিবার। আপনারা ইচ্ছামতো এখান থেকে পেয়ারা খেতে পারবেন তবে গাছের ডাল ভাঙা যাবে না। বাগান ঘুরে আমরা আবার চলে এলাম যেখান থেকে নৌকায় উঠলাম সেখানে। ছারছীনা ঘাটে এসে সন্ধ্যা নদীতে গোসল করে শরীর শীতল করে নিলাম। এরপর দুপুরের ভূরিভোজ শেষে প্রবেশ করলাম ছারছীনা দরবার শরিফে। সেখানে জোহরের নামাজ পড়ে পুরো মাদ্রাসা ঘুরে দেখলাম।

ছারছীনা দরবার শরিফ পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার অন্তর্গত ছারছীনা দরবার শরিফ বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দরবার শরিফ। এই দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা পীর শাহ্সুফী হযরত মাওলানা নেছার উদ্দীন আহমদ (রহ.)।