ঢাকা, বুধবার, ৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

মহাসড়কের শৃঙ্খলা নিরাপত্তায় নজর

প্রকাশনার সময়: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৮

দেশের ৩ হাজার ৯৯৪ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। এর অংশ হিসেবে গত ১৫ দিনে ১১ হাজার ৭৭৮টি যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনা রোধে সব মহাসড়কে ৩০৪১টি থ্রি-হুইলার শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। যদি আগেও এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই মহাসড়কগুলো আবারও পুরোনো চেহারায় ফিরে গেছে। তবে এবার হাইওয়ে পুলিশ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘মহাসড়কে শৃঙ্খলার আরও উন্নতি করতে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। পুলিশ সদর দপ্তর আমাদের নানাভাবে সহায়তা করছে। সারা দেশের মহাসড়কগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। ওই ক্যামেরার মাধ্যেমে সব যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোনো যানবাহন যদি গতিসীমা ক্রস করে তাহলে তাৎক্ষণিক শনাক্ত করে ওই যানবাহনের নামে ভিডিও মামলা দেয়া হবে এবং তা কাগজপত্রে থাকা ঠিকানায় পৌঁছে দেয়া হবে। সেখানে মামলার কারণ উল্লেখ করা থাকবে। প্রয়োজনে অপরাধের ধরন যানবাহনের মালিক নিজেই তার মোবাইল ফোনে দেখতে পাবেন। এর অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে প্রায় ১২ হাজার যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন দায়ের করা হয়। এছাড়া তিন হাজার থ্রি-হুইলারও রয়েছে শাস্তির আওতায়।

তিনি বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশ বদ্ধপরিকর। বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অপেশাদার চালক ও থ্রি-হুইলারের কারণে। এ জন্য হাইওয়ে পুলিশের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের প্রধান প্রধান মহাসড়কে অভিযান শুরু করে হাইওয়ে পুলিশ। অতিরিক্ত গতি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অপেশাদার চালক ও থ্রি-হুইলার শনাক্তে এ অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানের ১৫ দিনে হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিয়ন ২ হাজার ৭০৮, কুমিল্লা রিজিয়ন ২ হাজার ৮৭১, বগুড়া রিজিয়ন ২ হাজার ২৭৪, মাদারীপুর রিজিয়ন ১ হাজার ৪১৪, খুলনা রিজিয়ন ১ হাজার ৭৩৩ ও সিলেট রিজিয়ন ৭৭৮টি প্রসিকিউশন করে। সব রিজিয়ন মিলিয়ে এ সংখ্যা ১১ হাজার ৭৭৮টি।

একই সময়ে পাঁচ রিজিয়নের সদস্যরা তিন হাজার ৪১টি অযান্ত্রিক থ্রি-হুইলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এর মধ্যে গাজীপুর রিজিয়ন ৮৯৯, কুমিল্লা রিজিয়ন ৭৫৯, বগুড়া রিজিয়ন ৯৯১, মাদারীপুর রিজিয়ন ২৯ ও খুলনা রিজিয়ন ৩৬৩টি যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।

এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (এইচ আর অ্যান্ড মিডিয়া) মো. শামসুল আলম বলেন, দেশের বেশিরভাগ দুর্ঘটনায় ঘটে, বেপরোয়া গতি, থ্রি-হুইলার যানবাহন ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে। প্রতিটি দুর্ঘটনায়ই একটি পরিবার অকল্পনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ কারণে দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিসি ক্যামেরা বসানো, জাতীয় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধ করার উদ্যোগ রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে মহাসড়কের চিত্র অনেকটাই বদলিয়ে দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সব শেষে ১৫ দিনে ১২ হাজার যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন দায়ের করা হয়। প্রসিকিউশন হচ্ছে এমন এক ধরনের ব্যবস্থা যেখানে কারও লাইসেন্স না থাকলে তাৎক্ষণিক জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া। এছাড়া অনেক থ্রি-হুইলারকে জব্দ ও শাস্তি-জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে। তারা এ ধরনের যানবাহন মহাসড়কে আর উঠাবে না এমন অঙ্গীকারের পর তাদের ছাড়া হয়েছে। এ বিষয়টিও নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।

জানা গেছে, দেশে বর্তমান ৯৬টি জাতীয় মহাসড়কের পরিধি ৩৯৯৪ কিলোমিটার ও ১২৬টি আঞ্চলিক মহাসড়কের পরিধি ৪৮৮৩ কিলোমিটার। এছাড়া জেলা সড়ক রয়েছে ১৩৫৯২ কিলোমিটার। এর মধ্যে সব থেকে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে জাতীয় মহাসড়কে। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এ সড়কে অবাধে থ্রি-হুইলার যানবাহনের চলাচল, বেপরোয়া গতি ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধ বিচরণ। এ কারণে দেশের মহাসড়কে তথা হাইওয়েতে নজরদারির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে পুলিশের বিশেষ ইউনিট ‘হাইওয়ে পুলিশ’ বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৫ সালের ১ আগস্ট ২২টি মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, অটোরিকশা, অটোটেম্পো ও অযান্ত্রিক যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের কারণেই মহাসড়কে এসব যান চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না। তারা নিয়মিত নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা পায়। চাঁদার ভাগ কতিপয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ জেলা-উপজেলার রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে যায়। বিষয়টি পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারের হাইকমান্ডকে জানান হয়েছে। পাশাপাশি ‘মহাসড়কে চিরতরে এসব যান চলাচল বন্ধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে রেঞ্জ ডিআইজি ও এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে এবং জোরালো অভিযান চালাতে হাইওয়ে পুলিশকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ ওই নির্দেশনার অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে অভিযান শুরু করে হাইওয়ে পুলিশ। অভিযানের শুরুর আগে বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের যাহবাহনের মালিক পক্ষ থেকে কাগজপত্র ঠিক করার সময় দেয়া হয়। ওই সময় শেষ হওয়ার পর অভিযান শুরু করা হয়। প্রথম অবস্থায় শ্রমিক ও মালিক সমিতির পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা হলেও পুলিশের অবস্থান অনড় থাকায় তারা সুবিধা করতে পারেনি। এমনকি থ্রি-হুইলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার শুরু হলে স্থানীয় সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বাধার সৃষ্টি করে। সেখানে পুলিশের অনড় মনোভাবে তারা পিছু হটে।

হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হাইওয়ে পুলিশের জনবল সংকট রয়েছে। এছাড়া এক থানা থেকে অন্য থানার দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। এ কারণে অনেক সময় অভিযান চললেও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার যানবাহন চলাচল শুরু করে। এ ধরনের সংকট কাটিয়ে উঠতে মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা ও নতুন ৭২টি থানা স্থাপনের চেষ্টা চলছে। এগুলো সম্পন্ন হলেই মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

সূত্র মতে, এরই মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও খুলনা মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। পর্যায়ক্রমে বাকি সড়কগুলোতেও কাজ শুরু হবে। এক বছরের মধ্যে মহাসড়কের আনাচে-কানাচে ক্যামেরার আওতায় আসবে। যেসব সড়কে সিসি ক্যামেরা থাকবে, সেখানে কোনো গাড়ি আইন অমান্য করলে সেটির নম্বর প্লেট কন্ট্রোল রুমে সিসি ক্যামেরার পর্দায় (স্ক্রিনে) ভেসে উঠবে। ফলে ‘অটোমেটিক ডিটেকশন ব্যবস্থা’ ব্যবস্থায় গাড়িগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মামলার আওতায় আসবে। এরপর ঠিকানা যাচাই-বাছাই হওয়ার পর মামলার কাগজপত্র চলে যাবে সংশ্লিষ্ট ঠিকানায়। এসব বিষয়ে তদারকির জন্য প্রতিটি জোনে বসানো হবে আলাদা আলাদা কন্ট্রোল রুম। একই সঙ্গে বিষয়গুলো আরও তদারকির জন্য নতুন করে ৭২টি হাইওয়ে থানা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ