ঢাকা, রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

চড়া সুদে ধার নিচ্ছে ব্যাংক

প্রকাশনার সময়: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:১০

ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ দিচ্ছে—সেই হারে আমানত পাচ্ছে না। এতে অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়েছে। ফলে দৈনন্দিন টাকার চাহিদা মেটাতে এক ব্যাংককে আরেক ব্যাংকের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিতে হচ্ছে। কলমানিতে সুদের হার বেড়ে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠেছে। একই সময়ে গড় সুদের হার দাঁড়িয়েছে ৮ শতাংশের বেশি। এটি গত ১১ বছরে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালে কলমানিতে গড় সুদের হার উঠেছিল ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কলমানি মার্কেট ছিল ব্যাংকগুলোর জন্য সহজে প্রয়োজন মেটানোর একটা মাধ্যম। এখানে রেট বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলো আরও বেশি সুদে আমানত সংগ্রহের দিকে ঝুঁকবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, কলমানিতে সুদের হার বেড়ে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠেছে। আর গড় সুদের হার ছিল ৮ শতাংশেরও বেশি। যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালে কলমানিতে গড় সুদের হার উঠেছিল ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ।

জানা গেছে, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে সুদের হার বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ হার বাড়িয়ে বাজারে টাকার প্রবাহে লাগাম টেনে মূল্যস্ফীতির হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ কারণে সব খাতেই ঋণের সুদ হার বাড়ছে। ইতোমধ্যে সরকারের ঋণ গ্রহণের ট্রেজারি বিলের সুদের হারও বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে কলমানির সুদের হারও।

তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা জানান, আগে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকট মোকাবিলা করতে কলমানি মার্কেট থেকে এক দিনের জন্য ধার করত। পরের দিন তা সমন্বয় করে দিত। এখনো তাই করছে। তবে ব্যাংকগুলো এখন কলমানির পাশাপাশি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ধারও করছে বেশ। এসব অর্থ সহসা ফিরে আসছে না বাজারে। যে কারণে কলমানিতে ধার দেয়ার সক্ষমতা অনেক ব্যাংকের কমেছে। তবে ধার করার প্রবণতা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক কলমানিতে গড়ে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ সুদে ১ থেকে ৯০ দিন মেয়াদি মোট ৫ হাজার ৯৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে একদিন মেয়াদি ধারের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২৫২ কোটি টাকা, যার সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৫০ এবং সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।

জানা গেছে, আন্তঃব্যাংক কলমানির সঙ্গে শর্ট নোটিশে ধারের সুদের হারও বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার ৩ থেকে ১৪ দিন মেয়াদি ধারের সর্বোচ্চ সুদের হার ছিল ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সুদহার ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। আর গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশে।

শুধু কলমানিতে নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও বড় অঙ্কের স্বল্পমেয়াদি ধার করা অব্যাহত রেখেছে একাধিক ব্যাংক। গত বুধবার রেপো, তারল্য সহায়তা ও স্টান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি উপকরণের আওতায় ১৯ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা ধার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের দিন এ ধারের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে সুদের হার বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ হার বাড়িয়ে বাজারে টাকার প্রবাহে লাগাম টেনে মূল্যস্ফীতির হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এ কারণে সব খাতেই ঋণের সুদহার বাড়ছে। ইতোমধ্যে সরকারের ঋণ গ্রহণের ট্রেজারি বিলের সুদের হারও বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাবে কলমানির সুদের হারও বেড়েছে। ব্যাংকারদের মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি রেট বাড়িয়েছে। গত মাসে নীতিগত সুদহার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়। সাধারণত পলিসি রেট বাড়লে কলমানি সুদহারও বেড়ে যায়।

বেসরকারি সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকে টাকা কম। তাই নিজেদের তারল্য দিয়ে চলছে না। অন্য ব্যাংক থেকে বেশি সুদে ধার নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু ব্যাংক রয়েছে যারা এমনিতেই দুর্বল, তারাও উচ্চ সুদে টাকা নিচ্ছে। যদি সুদহারে সীমা না থাকত তাহলে কলমানি রেট আরও বাড়ত। তবে মূল্যস্ফীতির এ সময় মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। পাশাপাশি এক্সচেঞ্জ রেটেও ছাড় দিতে হবে। জানা গেছে, কলমানিতে বিভিন্ন মেয়াদে ধার দেয়া হয়। ৯১ দিন, ৭ দিন, ৪ দিন, ২ দিন ও ১ দিনের মেয়াদে এ ধার আদান-প্রদান হয়। সাধারণত একদিন মেয়াদে সবচেয়ে বেশি টাকা ধার দেয়া হয়।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ