ঢাকা, বুধবার, ৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

বেঁধে দেয়া দামে মিলছে না পণ্য

প্রকাশনার সময়: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৪০ | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৪৬

সিন্ডিকেট-কারসাজি করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রুখতে সরকারের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরও বাজারে নির্দিষ্ট দামে মিলছে না আলু ও পেঁয়াজ। সরকার গত বৃহস্পতিবার আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার থেকেই এই দর কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও বাজারে এর কোনো প্রভাবই নেই। বরং আলু-পেঁয়াজসহ প্রায় সকল ধরনের নিত্যপণ্যের মূল্য ক্রেতা সাধারণের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এদিকে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সরকারের বেঁধে দেয়া দামে পণ্য বিক্রি নিশ্চিতে মাঠে নামছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি আলু ৫০ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে। আবার প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা দরে। এ ছাড়াও আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। দোকানিদের দাবি- সরকারের বেঁধে দেয়া দামে আলু কিনতে পারেননি তারা। তাই আগের দামেই বিক্রি করছেন। মুগদা মধুবাগ বাজারের খুচরা বিক্রেতা বলেন, ‘সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ৩৫ টাকা। সেই দামে আলু আমরা কিনতেও পাইনি। বেচব কি করে?’ একই কথা জানিয়ে আরেক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, ‘এসব আলু আমার আগের কেনা। ৪০ টাকাতেও বিক্রি করার সুযোগ নাই।’

এদিকে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মাঝে সরকার প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। পাশাপাশি সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৫ টাকা কমানো হয়েছে। এই হিসেবে বর্তমানে প্রতিকেজি বোতলজাত সয়াবিন ১৬৯ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা দরে বিক্রির কথা। এ ছাড়াও পাম তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা কমিয়ে ১২৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছ। কিন্তু দাম বেঁধে দেয়ার পরও গতকাল শুক্রবার আগের মতোই ১৫০ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ডিম। হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা।

অন্যদিকে, আজও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে আদা-রসুন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি রসুন ২২০-২৩০ টাকা এবং আদা ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যদিও বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভার পর অসাধু ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, প্রথম পর্যায়ে সীমিত আকারে ডিম আমদানি করা হবে। তবে ১২ টাকার বেশি দামে বিক্রি হলে, তখন বেশি পরিমাণ ডিম আমদানি করা হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাজারে কোনো কারণ ছাড়াই অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য রয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন ন্যায্যদাম কার্যকর করব। নতুন করে টিসিবির কার্ড করা হচ্ছে। আমরা (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়) ৫০ লাখ পরিবারের জন্য কার্ড করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক কোটি করার নির্দেশ দিয়েছেন। বাকিগুলো শিগগিরই মানুষ হাতে পেয়ে যাবে। কার্ডের কাজ চলছে।

এদিকে, বাজারে সরবরাহে ঘাটতি না থাকার পরও কমছে না সবজির দাম। শুক্রবার বাজারে লম্বা বেগুন প্রতিকেজি ৭০-৮০ টাকা, গোল বেগুন ৮০-৯০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, করলা ৮০-৯০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকা, ঢেড়স ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও মান ও আকারভেদে লাউ প্রতিপিস ৬০-৮০ টাকা, জালি ৫০-৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০-৭০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। যা গেল সপ্তাহজুড়েও কিছুটা কমে বিক্রি হয়েছে।

অন্যদিকে, নতুন সবজি হিসেবে বাজারে প্রতিকেজি শিম ১৬০-১৮০ টাকা, টমেটো ১২০-১৪০ টাকা, মুলা ৬০-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কচুর মুখি ৮০-৯০ টাকা কেজি, পুঁইশাক ৪০ টাকা আঁটি, পাট শাক ১৫-২০ টাকা আঁটি, লাল শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে বাজারের দোকানের তুলনায় ফুটপাতের দোকানগুলোয় প্রত্যেক সবজি ৫-১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে দামের চাপে ভোক্তাদের যখন নাভিশ্বাস তখন পেঁয়াজ, আলু, ডিম, তেলসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপের কারণে বাড়তি দামে স্যালাইন বিক্রি ঠেকাতেও দেয়া হয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি। তাই পণ্যের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি নিশ্চিতে মাঠে নামছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য এবং স্যালাইনের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে কঠোর বাজার অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ