ঢাকা, রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

ভাতা তুলতে ঘুষ দিতে হয় ব্যাংক ম্যানেজারকে

প্রকাশনার সময়: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ২১:৩৮

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রতিবন্ধী, বিধবা ও বয়ষ্ক ভাতা তুলতে দিতে হয় পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা। টাকা না দিলে ভাতা তুলতে নানা হয়রানির শিকার হতে হয় অসহায় ভাতাভোগী মানুষের। এমনই অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নিকিলেশ তালুকদার ও তার সহযোগী আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার প্রতিবন্ধী, বিধবা ও বয়ষ্কদের ভাতা গ্রহণের একমাত্র প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংক তাহিরপুর শাখা। ব্যাংকে পূর্বে এসব ভাতা প্রদানের জন্য নির্ধারিত দিন ঠিক করে ভাতা দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংক ম্যানেজার নিকিলেশ তালুকদার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ভাতা প্রদানে এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করে সবার ভাতা আটকে রেখেছন। ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা অথবা বড় মাপের মানুষের সুপারিশ ছাড়া ভাতা দেন না তিনি। টাকা না দিতে পারা প্রতিবন্ধী, বিধবা ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধার মতো অসহায় মানুষদের ভাতা না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। এতে এলাকার ভাতাভোগী ও স্থানীয় সচেতন মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের বিধবা শাফিয়া বেগম বলেন, ‘আমরা ভাতার জন্য প্রায় সময় ব্যাংকে আসলে ব্যাংকের লোকে আমাদের ভাতা দেওয়া হবে না বলে তাড়িয়ে দেয়। আবার আমাদের মতো অনেকের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাতা দিয়েছেন। অনেক দিন টাকা না দেওয়ায় ভাতা না নিয়ে আমরা ঘুরে গেছি। আজকে অসহায় হয়ে ধার করে ৫০০ দিয়ে ভাতা পেলাম।’

বাদাঘাট ইউনিয়নের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এমদাদ নুর বলেন, আমি অন্ধ মানুষ ভাতা নিতে ব্যাংকে আসলে তারা বলেন সময় হয়নি। ভাতা দেওয়া যাবে না। ম্যানেজার সাহেবের কাছে গেলেও কোনো লাভ হয়নি। তিনি তার সহযোগী কাশেমের সাথে কথা বলতে বলেন। পরে কাশেমকে ৫০০ টাকা দিলে তিনি ভাতা পাইয়ে দেন।

তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান তুজাম্মিল হক নাছরুম বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে সোনালী ব্যাংক তাহিরপুর শাখার ভাতা প্রদানে অনেক অভিযোগ আসছে। অনেক উপকারভোগী ভাতা না পেয়ে আমাদের কাছে আসে। আমরা বললে বলে এখন ভাতা দেওয়া যাবে না। আবার অনেকে ভাতা উত্তোলন করে নিয়ে যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যারা পেয়েছে তাদের টাকা দিতে হয়েছে।

তাহিরপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান জুনাব আলী বলেন, বর্তমান ব্যাংক ম্যানেজার ভাতা দিতে উদ্যোগ নিচ্ছেন না। প্রতিদিন আমার কাছে অনেকেই ভাতা না পেয়ে আসে। আমি কল দিয়ে বললে ভাতা দেন। অন্যতায় ভাতা অসহায় মানুষদেরকে হয়রানি করেন। আমার কাছে অনেকে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা দিয়ে ভাতা আনতে হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে সোনালী ব্যাংক তাহিরপুর শাখার ম্যানেজার নিকিলেশ তালুকদার বলেন, আমি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। এ ধরনের কোনো অভিযোগও আসেনি।

ভাতাভোগীদের হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, সামনের মাস থেকে ভাতার নির্ধারিত দিন তারিখ ঠিক করে ভাতা দেব।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আসাদুজ্জামান রনি বলেন, এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ