নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
স্থানীয় সরকারের খাল খনন প্রকল্পের আওতায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবের গোছামারা খাল খননের নামে বাংলা ও লোড ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে মেসার্স মুমিনুল হক অ্যান্ড হাসান কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
এক্সকেভেটরের মাধ্যমে খাল খননের কথা থাকলেও বর্ষা মৌসুমে ৩টি বাংলা ও ২টি লোড ড্রেজার দিয়ে অনৈতিকভাবে খালের পাশের কৃষি জমি কেটে বালু বিক্রি করায় ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের শতশত মানুষ। অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী মহল। শত শত বিঘা ফসলি জমি নষ্ট হওয়ায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয় শিমুলকান্দি ইউনিয়নের কয়েকশত কৃষক।
শুকানো মৌসুমে এক্সকাভেটর দিয়ে খাল খননের অনুমতি নিয়ে ওয়ার্ক অর্ডারে নির্ধারিত সময়ের একমাস আগে ড্রেজারে বালু লুট করছে ওই সিন্ডিকেট।
স্থানীয়দের অভিযোগ- আরওআর, সিএস, বিএস অনুযায়ী কৃষকরা মালিক। ঠিকাদার মমিনুল হক সেলিম স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও কিছু দুস্কৃতিদের সাথে নিয়ে আমাদের হুমকি ধামকি দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। ভেকুর পরিবর্তে ঠিকাদার একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজেদের ইচ্ছেমতো আমাদের জমি থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। ড্রেজারে খাল খননের কারণে আমাদের জমির নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। খালটি ৭০% মাটি ভেকু দিয়ে এবং ৩০% মাটি লেবার দিয়ে কাটার কথা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা না করে আমাদের ফসলি জমি হতে ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার শিমুলকান্দি ইউনিয়নের গোছামারা, রাজাকাটা, কান্দিপাড়া ও চাঁনপুর গ্রামের সংযোগ স্থল গোছামারা খালটি (কোদালকাটি খাল) এক্সকাভেটরের পরিবর্তে
দুটি লোড ড্রেজার ও তিনটি বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন মেসার্স মমিনুল হক অ্যান্ড হাসান কনস্ট্রাকশন নামের এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে বালু বিক্রির সিন্ডিকেটে শ্রীনগর ইউনিয়ন আ. লীগ সভাপতি অ্যাড. আবুল বাসার ও শিমুলকান্দি ইউনিয়নের আ. লীগের সভাপতি আব্দুল আজিজসহ আ. লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জড়িত রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।এ বিষয়ে শ্রীনগর ইউনিয়ন আ. লীগ সভাপতি অ্যাড. আবুল বাসার মুঠোফোনে বলেন, ড্রেজারে খাল খননের বিষয়ে খোঁচাখোঁচি করার কি দরকার। ভৈরবের সব সাংবাদিক বালু উত্তোলনের বিষয়ে নিরব রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নিজে এই কাজে জড়িত রয়েছি বলেই তোমাকে ফোন দিয়েছি।
শিমুলকান্দি ইউনিয়ন আ. লীগ সভাপতি আবদুল আজিজ বলেন, আমি গোছামারা কাজে জড়িত নয়। আমি আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে আরো কিছুদিন পর শুকনো মৌসুমে চাঁনপুর রাজাকাটা এলাকায় খননের কাজ করবো। সিডিউলে ভেকু ও ড্রেজার দুটোই হয়েছে।
অভিযুক্ত ঠিকাদার মুমিনুল হক সেলিম মুঠোফোনে বলেন, কিশোরগঞ্জ এলজিইডির খাল খনন প্রকল্পের কাজ আমি পেয়েছি। সিডিউল মোতাবেক কাছ করছি। কিছু ঠিকাদার কাজের টেন্ডার না পেয়ে এ কাজের বিরোধিতা করছে। আমিও চাই কৃষকের জমির যেন কোনো ক্ষতি না হয়।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, গোছামারা খাল খননের কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। খাল খননের নামে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করছে এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কাটতে হবে। ড্রেজারে কাটার কোন নিয়ম নেই।
কিশোরগঞ্জ এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, সিডিউলে এক্সকাভেটর ও ড্রেজার দুটোই রয়েছে। তবে বাংলা ও লোড ড্রেজারে কাটতে পারবে না। আগামী ১৫ অক্টোবর মাটি কাটা শুরু, কিন্তু এক মাস আগে আমার নাম ভাঙিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগ শুনতেছি। আমি কোনোভাবেই জড়িত নয়। আর বালু উত্তোলন কিংবা বিক্রির অনুমতির এখতিয়ার আমাদের নেই। এটা জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন দেখবে। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ড্রেজারে খাল খননের বিষয়ে যদি ইউএনওর কাছে অভিযোগ আসে তাহলে তিনি বিষয়টি দেখবে। অভিযোগের তিনদিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি জানালে, তিনি এ বিষয়ে ইউএনওর সাথে কথা বলে জানান।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ