নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতায় ঢাকা-সিলেট করিডোর মহাসড়ক বিনিয়োগ প্রকল্প সিক্স লেনের কাজের শুরুতেই বাধার মুখে পড়েছে প্রকল্পের কাজ। সড়কের বালু সরবরাহে বাধা এবং আনলোড ড্রেজার ভাঙচুর ও শ্রমিদের উপর স্থানীয় লোকজনের হামলার কারণে কাজ শুরুর তিন দিনের মাথায় বালু উত্তোলন বন্ধ হওয়ায় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।
সরেজমিনে জানা যায়, বালু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং প্রকল্পের ম্যানেজারের কাছে রায়পুরার কয়েটি গ্রামের স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী ও লোকজন মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবি করেন। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেওয়ায় কাজের শুরুতেই দেওয়া হয় বাধা এবং শুক্রবার (১৫ সেপ্টম্বর) বিকেলে ড্রেজারে বালু আনলোডের সময় হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় ড্রেজারের ম্যানেজার ও শ্রমিকদের মারধর করে নগদ টাকা ও তেলের ড্রাম লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় রায়পুরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতায় ঢাকা সিলেট করিডোর সড়ক বিনিয়োগ প্রকল্প সিক্স লেনের কাজটি ১৩টি প্যাকেজের আওতায় সম্পন্ন করা হবে। এর মধ্যে হেগো-মীর আক্তার জয়েন্ট ভেঞ্চার নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিনটি প্যাকেজের কাজের দায়িত্ব পান। প্যাকেজ নম্বর ডিএস-৪ এর আওতায় বালু সরবরাহসহ ধাপে ধাপে সড়কের বিভিন্ন কাজ রয়েছে। প্যাকেজ নম্বর ডিএস-৪ এ প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় (১১,৮৭৫৭৯৭৫৫) এক হাজার একশত সাতাশি কোটি সাতান্ন লাখ সাতানব্বই হাজার সাতশত পঞ্চান্ন টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ৪ বছর।
বালু সরবরাহের জন্য হেগো-মীর আক্তার জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং প্রকল্প ও নৌ-পরিবহনের কার্যাদেশ প্রদান করেন। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ওই কাজের অংশ হিসেবে নরসিংদীর মারকো ফিলিং স্টেশন থেকে ভৈরব ব্রিজ পর্যন্ত বালু সরবরাহের জন্য মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং প্রকল্পের মালিক মো. মিন্টু মিয়া গত ১৩ সেপ্টেম্বর ব্রহ্মপুত্র ব্রিজের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে রায়পুরা উপজেলার মাহমুদাবাদ নামাপাড়া নদীর পাড়ে বালু সরবরাহের কাজ শুরু করেন। কাজের শুরুতেই রায়পুরার মাহমুদাবাদ, রামনগর, নীলকুঠি ও মির্জাপুরের কিছু বালু ব্যবসায়ী ও কতিপয় লোকজন বালু আনলোডে বাধা প্রদান করে এবং মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। তাদের দাবির চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রায় দেড় শতাধিক লোকজন দা, বল্লম ও লাঠি-সোঁটা নিয়ে সরকারি কাজে বাধা প্রদান করে এবং আনলোড ড্রেজার ভাঙচুর, টাকা ও তেল লুটপাট করে ড্রেজারের ম্যানেজার ও শ্রমিকদের উপর হামলা ও মারধর করে আহত করেন। হামলা থেকে বাঁচতে শ্রমিকরা নদী সাঁতার দিয়ে ভৈরব প্রান্তে চলে এলে তারা নৌকা নিয়ে এসে পুনরায় মারধর করে চলে যায় বলে অভিযোগ করা হয়।
বালু আনলোডে বাধা, হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় ওইদিন রাতেই মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং প্রকল্পের ম্যানেজার নাঈম আলসিন বাদী হয়ে রায়পুরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
এজাহারে মির্জা ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহীকে প্রধান অভিযুক্ত করে ২৯ জনের নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাত ১০০/১৫০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহী বলেন, আমি কোনো ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে জড়িত নয়। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আমার এলাকার বালু ব্যবসায়ীদের নিয়ে ভৈরবের মিন্টু মিয়ার সাথে আলোচনা করেছি। তাদের সাথে নিয়ে যেন কাজ করে। মিন্টু মিয়া যে টাকায় বালু সরবরাহ করবে তার চেয়ে বালুর রেইট নদীতেই বেশি। আমি বিষয়টি সুরাহা করতে না পারায় আমাদের এমপি রাজিউদ্দিন রাজু মহোদয়কে অবগত করেছি। আগামীকাল রোববার এ বিষয়ে এমপি সাহেব আলোচনায় বসবেন। এর আগে যেন ড্রেজারে বালু উত্তোলন না করে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু এর আগে বালু আনলোড করায় স্থানীয় লোকজন কাজে বাধা দেয়ার খবর শুনে তাদেরকে ফোন করে ফিরিয়ে আনি আমি। কোনভাবেই সরকারের উন্নয়ন কাজে যেন বাধা না দেয় বলেছি। তারপরও যদি কেউ সরকারি কাজে বাধা দেয় সেটা তাদের নিজ দায়িত্বে করতে হবে। তবে দুঃখের বিষয় হলো আমি ঢাকায় থাকি অথচ আমাকে মামলায় মিথ্যা অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ভৈরব নৌ-পুলিশ ইউনিটের ইনচার্জ (এস আই) রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি কাজে নদীতে এসে কিছু লোকজন ঝামেলা সৃষ্টি করেছে। ড্রেজার ও শ্রমিকদের উপর হামলা করেছে অভিযোগ পেয়ে শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সরকারি কাজে কেউ বাধা দিলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং প্রকল্পের মালিক মোশাররফ হোসেন মিন্টু বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিক্স লেনের কাজের জন্য বালু সরবরাহ করছি। রায়পুরার কিছুলোক কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় আমার ড্রেজার ভাঙচুর, লুটপাট ও শ্রমিকদের মারধর করে আহত করে। এ ঘটনায় রায়পুরা থানা ও ভৈরব থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।
এ বিষয়ে ঢাকা-সিলেট করিডোর মহাসড়ক বিনিয়োগ প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার শের শাহ ফরিদ বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিক্স লেনের কাজের তিনটি প্যাকেজ পেয়েছে হেগো-মীর আক্তার জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। প্যাকেজ ৪-এর আওতায় ভৈরব থেকে মারকো ফিলিং স্টেশন নরসিংদী পর্যন্ত এরিয়া। ব্রহ্মপুত্র নদের মাহমুদাবাদ পুরাতন ফেরিঘাটে প্রকল্পের ক্যাম্পের জন্য জায়গা নিয়েছি। রাস্তার কাজের জন্য সরকারি বালু মহাল থেকে বালু সরবরাহ করছি। স্থানীয় হিসেবে যাচাই-বাছাই করে যোগ্যতার ভিত্তিতে ভৈরবের মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং প্রকল্পকে বালু সরবরাহের জন্য ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছি। বালু আনলোডের জন্য মিন্টু সাহেব ড্রেজার ও পাইপ লাইন স্থাপন করে বালু আনলোডের সময় গতকাল শুক্রবার বিকেলে রায়পুরা স্থানীয় লোকজন এসে হামলা চালিয়ে ড্রেজার ভাঙচুর ও শ্রমিকদের মারধর করেন এবং ড্রেজারের ম্যানেজারকে নদীতে ফেলে দেয়। অনেক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। আমি ঘটনা শুনে ওসি সাহেবকে ফোন করলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠায় এবং আমিও ঘটনাস্থলে যাই।
তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের শুরুতেই বাধার মুখে পড়েছি। আমাদের ক্যাম্পের কাজে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও অভিযোগ জানাব।
নয়া শতাব্দী/এসএ/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ