ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বিলসুতি বিলে ধান ও মাছের সম্মিলিত চাষে আশার আলো

প্রকাশনার সময়: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:৪৩

একসঙ্গে ধান ও মাছ চাষ পদ্ধতি অনেক আগেই চালু রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে হারাতে চলেছে এই পদ্ধতি। কারণ এখন ধানি জমি কেটে পুকুরে পরিণত হচ্ছে। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় অনেক ধানি জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ হলেও উপজেলার দ্বীপপুর ইউনিয়নের বিলসুতি বিলে সম্মিলিত পদ্ধতিতে ধান ও মাছ চাষ করে দেড় হাজার কৃষকের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

বিলে ধানের পাশাপাশি মাছ চাষে লাভবান হয়েছেন অনেক কৃষক। বিলসংলগ্ন গ্রামীণ পরিবারে আশার আলো ছড়াচ্ছে এই পদ্ধতি। গ্রামের এসব পরিবারে সচ্ছলতা ফিরেছে। কৃষকরা জানান, দ্বীপপুর ইউনিয়নের বিলসুতি বিলের সরকারি খাসজলাশয় ২০১৮ সালের দিকে ছয় বছরের জন্য লিজ নেন বিলসুতি বিল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি অমূল্য হাওদালার। এরপর সেখানে চলে সম্মিলিত পদ্ধতি। শুরুতে অনেকে অনাগ্রহী হলেও লাভ শুরু হওয়ায় কৃষকরা এই পদ্ধতিতে আগ্রহ দেখান। এখন বিলের সব জমিতে সম্মিলিত পদ্ধতিতে মাছ ও ধান চাষ হচ্ছে। আর কৃষকরাও বিলে নিজেদের মালিকানায় থাকা জমি মৎস্যচাষ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসছেন। কৃষকদের সম্মিলিত উদ্যোগে দ্বীপপুর মৌজায় ২নং ‘বিলসুতি বিল মৎস্য চাষ প্রকল্প’ নামে ৩২৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করা হয়। ওই প্রকল্পের পক্ষ থেকে সকল কৃষকদের জমিতে বিনামূল্যে সেচ সুবিধা দিয়ে সম্মিলিত পদ্ধতিতে ধান ও মৌসুমি ফসল চাষের সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষ শুরু হয়েছে।

জমিতে বিনা খরচে চাষাবাদের সুযোগ পাওয়ায় প্রথম তিন বছরেই প্রকল্পের সদস্যদের পাশাপাশি এলাকার কৃষকরাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাভবান হচ্ছেন। সম্মিলিত পদ্ধতিতে ধান ও মাছ চাষ প্রকল্প ব্যাপক লাভজনক হওয়ায় ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চলতি সাল থেকে আবারো তিন বছরের জন্য নতুনভাবে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এবার প্রকল্পের সদস্য সংখ্যা আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে। লাভজনক এই প্রকল্পের সঙ্গে এবার দ্বীপপুর গ্রামের প্রায় ৯০ ভাগ কৃষক পরিবারের পাশাপাশি এলাকার কার্ডধারী মৎস্যজীবী, মৎস্যচাষি, শিক্ষক ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও যুক্ত হয়েছেন।

দ্বীপপুর গ্রামের কৃষক সৈয়দ আলী ও মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছ আলীসহ একাধিক কৃষক জানান, বিলসুতি বিলের কৃষকদের জমিতে বিনামূল্যে সেচ দিয়ে এবং অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে আলু, পেঁয়াজ, ভুট্টা এবং বোরো ও আউশ ধান চাষের সঙ্গে সম্মিলিত পদ্ধতিতে মাছ চাষ করায় উভয় ক্ষেত্রেই লাভবান হচ্ছেন। বিলসুতি বিলে দ্বীপপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলামের ১০ বিঘা এবং জমির উদ্দিনের ৭ বিঘা জমি রয়েছে। সম্মিলিত পদ্ধতিতে ধান ও মাছ চাষ করে গত তিন বছরে ব্যাপক লাভ পেয়েছেন বলে জানান তারা।

প্রকল্পের পরিচালক ইউপি চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান দুলাল বলেন, বিলসুতি বিলে যাদের মালিকানা জমি রয়েছে তাদের জমিতে বিনামূল্যে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে বিলের মধ্যে মোট ৩টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য দুটি শ্যালো মেশিনও স্থাপন করা হয়েছে। এতে বিল এলাকার কৃষকেরা তাদের জমিতে কম খরচে ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি সম্মিলিত পদ্ধতিতে মাছ চাষ করায় উভয় ক্ষেত্রেই লাভবান হচ্ছে।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ

x
Naya Shatabdi