ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রামে সিআরবি রক্ষার আন্দোলনে বিভক্তি

প্রকাশনার সময়: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:৫২

চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুসখ্যাত সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণকে ঘিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। আন্দোলনের প্রথম দিকে বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হাসপাতাল নির্মাণের বিপক্ষে থাকলেও বর্তমানে ঠিক তার উল্টো চিত্র দৃশ্যমান।

অর্থাৎ তারা এখন হাসপাতাল নির্মাণের পক্ষে সাফাই গাইছেন। আবার আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা এখনো হাসপাতাল নির্মাণের বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। আন্দোলনের বিষয়কে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের পরস্পরবিরোধী অবস্থান এখন স্পষ্ট। সিআরবি রক্ষায় অনেক নেতাকর্মী বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। কেউবা সিআরবির বড় বড় গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছেন পাখির বাসা। তারা হাসপাতালের পক্ষে অবস্থান নেয়া নেতাদের সঠিক পথ অনুসরণেরও আহ্বান জানিয়েছেন। আর ক্ষমতাসীন নেতাদের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে কর্মীরা হয়ে পড়েছেন দ্বিধাগ্রস্ত। তারা বুঝে উঠতে পারছেন না চলমান পরিস্থিতিতে তাদের করণীয়। চট্টগ্রামের ফুসফুসখ্যাত সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) এলাকায় রয়েছে শত বছরের পুরোনো বৃক্ষ। এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে যে কেউ মুগ্ধ হন। সিআরবির এসব গাছ কেটে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে হাসপাতাল। ইউনাইটেড গ্রুপ নির্মাণ করবে এ হাসপাতাল। আর এই হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে গড়ে উঠেছে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের আন্দোলন।

বলা হচ্ছে, এটা ‘চট্টগ্রামের ফুসফুস রক্ষার আন্দোলন’। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। জোরালো হচ্ছে হাসপাতাল নির্মাণ বিতর্ক। হাসপাতাল নির্মাণ উদ্যোগের নেপথ্যে সহযোগিতা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। হঠাৎ নগর ও জেলা ইউনিটের সিনিয়র নেতাদের আন্দোলনবিরোধী অবস্থানের কারণে কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেছেন আন্দোলনে জড়িত সংস্কৃতিকর্মীরাও। তবে এরই মধ্যে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ বেশ সাড়া ফেলেছে আন্দোলনের ভরা সময়ে।

গত বুধবার নগর আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজন সিআরবিতে শত বছরের পুরোনো বৃক্ষে লাগিয়ে দিয়েছেন মাটির তৈরি হাঁড়ি। তা পাখির বাসা হিসাবে লাগিয়ে রাখা হয়েছে সেখানে। সিআরবিতে ‘পাখির বাসা বসানো’র প্রতীকী কর্মসূচিতে যোগ দেন নগর আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল। তিনি সেখানে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিপক্ষে দৃঢ় বক্তব্য দেন। জানা গেছে, হঠাৎ করে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনকে কারণ দেখিয়ে চলমান আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন সিনিয়র নেতারা। তারা একের পর এক মুখ খুলতে শুরু করেন।

আন্দোলনের পক্ষের নেতারা শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামের প্রবীণ নেতা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের দ্বারস্থ হয়েছেন। আগে থেকেই সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে থাকা এই নেতা এখনো সেই অবস্থানের কথাই জানিয়েছেন আন্দোলনে সম্পৃক্ত নেতাদের। বেশ কয়েক মাস ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন মিরসরাইয়ের এই সংসদ সদস্য। তিনি এখন আন্দোলনকারীদের অনুরোধে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে একটি ভিডিও বার্তা দিতেও রাজি হয়েছেন বলে জানান নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নেয়া প্রকল্পের একটি। তাই নগর আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে শুরু থেকেই হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতা থেকে বিরত রয়েছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীরা। অন্যদিকে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সকলেই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। যদিও শুরু থেকে এই বিষয়ে নীরব থাকার কৌশল নিয়েছেন উপমন্ত্রী। ফলে সিআরবির এই হাসপাতাল নির্মাণের পক্ষ-বিপক্ষের লড়াই অনেকটা নগর আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের পুরোনো লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে।

এদিকে হঠাৎ করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরব হয়ে পড়েছেন। দিয়েছেন বক্তব্যও। এর পর নগর আওয়ামী লীগের সভায় অনির্ধারিত এক আলোচনায় নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন। এরপর কিছুটা বদলে যায় পরিস্থিতি। এতে আন্দোলনে সম্পৃক্ত আওয়ামী লীগ নেতারাও অনেকটা হতাশ হয়ে যান। নেতাকর্মীদের পরস্পরবিরোধী এমন কর্মকা-ে হতাশা প্রকাশ করেছেন সুশীল সমাজ। তাদের মতে, পরিবেশ রক্ষা করা গেলে জীবন বাঁচবে। জীবনকে উপেক্ষা করে গৃহীত পদক্ষেপ সকলের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই সময় থাকতে সবার সচেতন হওয়া উচিত।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ

x
Naya Shatabdi