ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৩, ২০ আশ্বিন ১৪৩০, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫
রাসিক নির্বাচন

সম্পদে এগিয়ে লিটন, নগদ টাকায় মুরশিদ

প্রকাশনার সময়: ২৯ মে ২০২৩, ০০:০১

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামী ২১ জুন। ইতিমধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে চার মেয়রপ্রার্থীর মনোনয়নপত্রই বৈধতা মিলছে। তাদের মধ্যে সম্পদে এগিয়ে রয়েছেন সদ্য সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। আর বার্ষিক আয়ে এগিয়ে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুরশিদ আলম।

আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী (হাতপাখা) ও জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার (গোলাপফুল) রয়েছেন। চারজনেরই মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

রাসিক নির্বাচন উপলক্ষে মেয়র প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বিএ অনার্স ও এলএলবি পাস। হলফনামায় পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন আইনজীবী ও রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। তার বার্ষিক আয় দুই কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে আইন পেশা থেকে কোনো আয় নেই তার। ১৯৯৬ সালের দুটি মামলা থাকলেও রাষ্ট্র কর্তৃক সেগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার নামে বর্তমানে কোনো মামলা চলমান নেই।

তথ্যমতে, বছরে কৃষি খাত থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা আয় লিটনের। এছাড়া বছরে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকান ভাড়া বাবদ আয় ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা, মৎস্য চাষ বাবদ আয় দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা। আর মেয়র হিসেবে সম্মানী ভাতা থেকে আয় ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। তার স্ত্রী শাহীন আকতার রেনীর ব্যবসায় বাৎসরিক আয় এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা ও মৎস্য চাষ থেকে আয় এক কোটি ৪১ লাখ টাকা।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লিটনের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ চার কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৯ টাকা। তার হাতে রয়েছে নগদ সাত লাখ দুই হাজার ২৩৭ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে দুই কোটি ৮৪ লাখ ৯১ হাজার ৮০০ টাকা, ৪০ লাখ ৮৫ হাজার টাকার শেয়ার, ৪৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি, ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ২৫ লাখ টাকার ইলেকট্রিক সামগ্রী, সাত লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র এবং ছয় লাখ টাকা দামের একটি শটগান ও একটি পিস্তল।

লিটনের স্ত্রী শাহীন আকতার রেনীর অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে- নগদ অর্থ ১৮ লাখ ৪৭ হাজার ১৩০ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে এক কোটি ৭৮ লাখ ৭৬ হাজার ৮৭০ টাকা, ১০ লাখ টাকার শেয়ার, নয় লাখ টাকার স্থায়ী আমানত, উপহার হিসেবে পাওয়া ৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, আড়াই লাখ টাকার ইলেট্রনিক সামগ্রী, দুই লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র রয়েছে। এছাড়াও প্রার্থীর নির্ভরশীলের নামে আড়াই লাখ টাকার স্থায়ী আমানত ও উপহার হিসেবে পাওয়া ২১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে।

এখন স্থাবর সম্পদ হিসেবে লিটনের রয়েছে ৪ দশমিক ৬৩ একর কৃষি জমি, নগরীর উপশহরে একটি তিনতলা বাড়ি, ঢাকার বনানীতে পাঁচ কাঠার বিনিময়ে আড়াইটা অ্যাপার্টমেন্ট এবং ৭০ লাখ ১২ হাজার ১৯০ টাকার মাছের খামার। আর তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ দশমিক ৭৭০৫ একর কৃষি জমি, নগরীর উপশহরে একটি দুইতলা পুরাতন বাড়ি এবং ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকার মাছের খামার।

অপরদিকে, রাজশাহী সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে হাতে সবচেয়ে বেশি নগদ অর্থ রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুরশিদ আলমের। হলফনামায় দেখানো তার নগদ টাকার পরিমাণ ১২ লাখ। এছাড়া অস্থাবর সম্পদ হিসেবে একটি মোটরসাইকেল, ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ফ্রিজ, ফ্যান, ল্যাপটপ এবং আসবাবপত্র হিসেবে খাট, শোকেশ ও আলমারি রয়েছে। তবে কোনোই স্থাবর সম্পত্তি বা ঋণ নেই এই প্রার্থীর। তার স্থায়ী ঠিকানা জানানো হয়েছে লালমনিহাটের আদিতমারি উপজেলার চন্দনপাট গ্রাম। বর্তমান বা আগে কোনো মামলা দায়ের হয়নি মুরশিদের বিরুদ্ধে। কামিল পাস এই প্রার্থীর পেশা হিসেবে বলা হয়েছে টিউশনি ও ধর্মীয় আলোচক। তবে তার বার্ষিক আয় তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা উল্লেখ থাকলেও আয়ের খাত সুনির্দিষ্টভাবে হলফনামায় উল্লেখ নেই।

এদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতি নেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীর। কিন্তু তার হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে ‘স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন। পেশায় তিনি সিজনাল পণ্য ক্রয়-বিক্রয়কারী। সেই ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় হয় তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা।

এছাড়া তার হাতে আছে নগদ তিন লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৫০ হাজার টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ৩০ হাজার টাকার ইলেট্রনিক সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। তবে সাড়ে চার বিঘা কৃষি জমি ও ১২ শতক অকৃষি জমি থাকলেও ঋণ নেই স্বপনের।

জাকের পার্টি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী একেএম আনোয়ার হোসেনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলএম পাস। পেশায় আইনজীবী, আর সেখান থেকেই তার বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকা। তবে কোনোই স্থাবর সম্পত্তি বা ঋণ নেই এই প্রার্থীর। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে হাতে রয়েছে এক লাখ টাকা। আর ব্যাংকে আছে মাত্র দুই হাজার টাকা, ৩০ হাজার টাকার ইলেট্রনিক সামগ্রী ও ২০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। তার বিরুদ্ধেও কোনো মামলা নেই।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় আগামী ১ জুন। প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ২ জুন। আগামী ২১ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

রাজশাহী সিটি নির্বাচনে এবার ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ১৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ১৮৫ এবং নারী এক লাখ ৮০ হাজার ৯৭২। আর এবারই প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৩০ হাজার ১৫৭ ভোটার।

নয়া শতাব্দী/এসআর/এফআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ