ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৩, ২০ আশ্বিন ১৪৩০, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

বাউফলে মৃত ব্যক্তি হলেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যা

প্রকাশনার সময়: ২৮ মে ২০২৩, ১৭:০৪

মৃত্যু হয়েছে ২১ বছর আগে, তবুও তাকে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির অভিভাবক পর্যায়ের সদস্য করা হয়েছে। বিষয়টি শুনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনই এক ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফলে।

জানা গেছে, উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের মোহসেন উদ্দিন নুরিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় ২১ বছর আগে মারা যাওয়া এক ব্যক্তিকে মাদ্রাসা কমিটিতে রাখা হয়েছে। এছাড়াও একই মাদ্রাসায় হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে একই ব্যক্তিকে পর পর তিনবার পরিচালনা কমিটি সভাপতি করা হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি গঠনে অনিয়ম করা হয়েছে।

এ ঘটনায় পটুয়াখালীর বাউফল সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছেন মো. নূর উদ্দীন নামের এক ব্যক্তি। আদালত সভাপতি ও অধ্যক্ষকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর জন্য আদেশ দিয়েছেন। বাদী নূর উদ্দীন হলেন, ওই মাদ্রাসার জমিদাতা ও সাবেক অধ্যক্ষ এ এস এম মুহিউদ্দিনের ছেলে।

রোববার (২৮ মে) সকালে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. আবুল কালাম আজাদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে কোনো ব্যক্তি পরপর দুই বারের বেশি থাকতে পারবেন না, এই মর্মে হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে। অথচ সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে পর পর তৃতীয় বারের মত মোসারেফ হোসেন খান নামে এক ব্যক্তিকে ওই মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার ও মাদ্রাসা কার্যালয়, সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমিটির ১৪ নম্বর ক্রমিকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করা হয়েছে মো. আফসার উদ্দীন আহম্মদকে। যিনি ২০০১ সালের ২৭ জুলাইয়ে তার মৃত্যু হয়। কমিটির ১১ নম্বর ক্রমিকে অভিভাবক সদস্য পদে মো. গোলাম মস্তফা নামে এক ব্যক্তির নাম রয়েছে। তিনি এ কমিটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে নয়া শতাব্দীকে জানান একটি সূত্র। এছাড়াও শিক্ষানুরাগী সদস্য করা হয়েছে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কালাইয়া বন্দরের বাসিন্দা এ এস এম আবদুল হাই নামে এক ব্যক্তিকে।

২০২২ সালের ৭ মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ৬ মার্চ পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি ১৫ সদস্য বিশিষ্ট ওই পরিচালনা কমিটির ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল অনুমোদন দেয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার মো. রেজাউল হক।

সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশিত হলে চলতি মাসের ২৪ মে আদালতে মামলা করেন নূর উদ্দীন। আদালত ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সভাপতি ও অধ্যক্ষকে সশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর জন্য আদেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদী নূর উদ্দীন অভিযোগ করেছেন, ‘অধ্যক্ষ সাহেব তার অনিয়ম ও দুর্নীতিকে হালাল করার জন্য অভিভাবকদের না জানিয়ে তাঁর পছন্দের লোক দিয়ে সবসময় পকেট কমিটি গঠন করেন।’

মাদ্রাসার শিক্ষক ক্বারী মো. শহীদুল্লাহ বলেন,‘দীর্ঘ বছর ধরে অধ্যক্ষ সাহেব গোপনে পকেট কমিটি করে আসছেন।’

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শিক্ষিত জনপথ, অথচ যাকে (এ এস এম আবদুল হাই) শিক্ষানুরাগী সদস্য করা হয়েছে তার বাড়ি প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার দূরে। সে কিংবা তার কোনো আত্মীয়-স্বজনের ছেলে-মেয়ে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনোদিন পড়াশোনা করেনি। তিনি মাদ্রাসায়ও আসেন না এবং তাকে কোনো অভিভাবকেরাও চেনেন না।’

সরকারি বিধি অনুযায়ী, এক ব্যক্তি দুটির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন না। অথচ মোসারেফ হোসেনের ক্ষেত্রে সেই বিধিও লঙ্ঘন করা হয়েছে। মোসারেফ হোসেন বর্তমানে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি।

তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো- কালাইয়া কামিল মাদ্রাসা, মোহসেনুদ্দিন নুরিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ও উত্তর দাসপাড়া দাখিল মাদ্রাসা।

জানতে চাইলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আবদুর রহিম বলেন, ‘মৃত ব্যক্তি বর্তমান কমিটির সদস্য, এটা সত্য। তবে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এ ভুল করেছে।’

হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে একই ব্যক্তিকে কিভাবে পর পর তিনবার সভাপতি করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় থাকলেও এ সংক্রান্ত পরিপত্র তিনি পাননি।’ আর তিনি স্বীকার করেছেন, মোসারেফ হোসেন তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি।

অরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি । তবে মৃত ব্যক্তির নাম কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নাই এবং একই ব্যক্তি পরপর দুই বারের বেশি সভাপতি হতে পারবেন না। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নয়াশতাব্দী/এমটি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ