রবিবার, ১১ জুন ২০২৩, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

গাজীপুরে অ্যাসিড টেস্ট

প্রকাশনার সময়: ২৪ মে ২০২৩, ০৮:৫১

রাত পোহালেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। গতকাল মধ্যরাত থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে নির্বাচনী প্রচারণা। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না বিএনপি। কিন্তু তারপরও এই নির্বাচনকে ঘিরে টানটান উত্তেজনা। আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এ নির্বাচন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

নির্বাচনে আজমত উল্লা নাকি জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন জয়ী হবেন-তা নিয়ে রয়েছে নানামুখী আলাপ-আলোচনা। এমন অবস্থায় কাল বৃহস্পতিবার তৃতীয়বারের মতো ভোট অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে।

সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে ভোটগ্রহণ। ৮ হাজার ১০০টি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এতে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। এদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ ও ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী এবং ১৮ জন রয়েছেন হিজড়া ভোটার। ভোটে মেয়র পদে আট প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান ও জায়েদা খাতুনের (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা) মধ্যে দ্বিমুখী লড়াই হবে বলে ধারণা করছেন নির্বাচন-বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেকগুলো কারণে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে প্রমাণ করতে হচ্ছে, বিএনপিকে ছাড়াও একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচন করা যায়। গাজীপুর নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন এই নির্বাচনকে ঘিরে গাজীপুরে যে উত্তেজনা এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা তা বিএনপিকে ছাড়া আরেকটি নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগকে উৎসাহিত করবে।

দ্বিতীয়ত, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলের ওপরও জাতীয় নির্বাচন অনেকখানি নির্ভর করছে। এ নির্বাচন যদি শেষ পর্যন্ত অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ বিবেচনায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে সেটি হবে আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক ঘটনা। তা হলে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করতে পারবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে। আর এর ফলে আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।

তৃতীয়ত, গাজীপুরে নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত পেশিশক্তির প্রয়োগ হয়, কারচুপির অভিযোগ ওঠে বা সরকার সমর্থিত প্রার্থীকে জোর করে জয়ী করার জন্য অন্য কোনো দৃশ্যমান অপতৎপরতা প্রমাণিত হয় সে ক্ষেত্রে সরকারের জন্য তা হবে এক ধরনের কঠিন পরীক্ষার মতো। এর ফলে জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আরও শক্তিশালী হবে। দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যায় না এ মতবাদটি আরও শক্ত পোক্ত হবে। এটি হবে আওয়ামী লীগের জন্য একটি চরম বিপর্যয়।

চতুর্থত, গাজীপুর নির্বাচনে যদি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পর আজমত উল্লার জয় হয় তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য সেটি হবে বোনাস পাওয়ার মতোই। কারণ তাহলে আওয়ামী লীগ বলতে পারবে ১৪ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পরও আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় ধস নামেনি। আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত জনপ্রিয় দল গাজীপুরের নির্বাচন তার প্রমাণ।

এ নির্বাচনে জয়ের ফলে আওয়ামী লীগের মধ্যে আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হবে তা হলো দলের ত্যাগী পরীক্ষিত এবং দুঃসময়ের কাণ্ডারিরাই মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য। বাইরে থেকে আমদানি করা অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিডদের নির্বাচনে প্রার্থী করা হলে সেটি দলের জন্য ভবিষ্যতে ক্ষতিকর হয়।

গাজীপুর নির্বাচনে যদি আজমত উল্লা বিজয়ী হন তাহলে সারা দেশে আওয়ামী লীগের মধ্যে যে বিভক্তি, কোন্দল ইত্যাদি অনেকটাই কমে যাবে এবং একটি ঐক্যের তাগিদ অনুভব করবেন নেতাকর্মীরা। কারণ দল থেকে বিচ্যুত হলে শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি কি হয় জাহাঙ্গীর সেটার প্রমাণ।

এই বিবেচনা থেকে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল উল্লেখযোগ্যহারে কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরের মা ভালো ফলাফল করেন তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য সেটিও হবে একটি বড় ধরনের বিপর্যয়কর ঘটনা। কারণ এর ফলে সারা দেশে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মহামারি শুরু হবে। যে যার মতো করে দাঁড়াতে থাকবে। দলীয় আদর্শবিহীন হঠাৎ টাকাওয়ালা ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য শক্ত দাবিদার সেটি আরেকবার প্রতিষ্ঠিত হবে।

এর ফলে শুধু গাজীপুরের আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না সারা দেশে আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। এ কারণে গাজীপুর নির্বাচনের ফলাফল কি হতে যাচ্ছে তার ওপর আগামী দিনের রাজনীতি বিশেষ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অনেক কিছু নির্ভর করছে।

দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস: এদিকে নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে ব্যস্ত সময় পার করেছেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ভোটারদের সমর্থন পেতে শেষ মুহূর্তে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ ও হিসেব-নিকেশ কষে ভোটারদের পিছু নিয়ে হন্যে হয়ে ছুটেছেন। সবার একটাই উদ্দেশ্য, নির্বাচনে জয়ী হওয়া।

নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় সংসদসহ আগামী নির্বাচনগুলোতে অনেকটা প্রভাব ফেলবে এমন ধারণায় এ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন প্রতিদিন ভিড় জমিয়েছেন গাজীপুরে। তবে প্রচারণার শেষ মুহূর্তে নির্বাচনের হিসাব পাল্টে গেছে। গত পাঁচ বছরে রাস্তা-ড্রেনেজ সিস্টেমসহ এলাকার তেমন কোনো উন্নয়ন না হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে ভোটারদের সামনে।

তাই প্রার্থী নির্বাচনে ভোটাররা এবার নানা বিষয় বিবেচনা করে তাদের মূল্যবান ভোট প্রদান করবেন। নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাকের পার্টিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী এবং তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সবার দৃষ্টিই এখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর দিকে। মূলত নির্বাচনে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে অন্য মেয়র প্রার্থীদের।

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি সাবেক টঙ্গী পৌরসভার মেয়র/চেয়ারম্যান হিসেবে তিনবার নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের এ মেয়র প্রার্থী নগরীর উন্নয়ন ও নাগরিক সেবার জন্য তার ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন।

টেবিল ঘড়ি প্রতীকের এ স্বতন্ত্র প্রার্থী নগরীর উন্নয়নে তার ছেলের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাদকমুক্ত সমাজ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি পরিকল্পিত নগর উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। নির্বাচনে এ দুই প্রার্থীর লড়াইয়ের সুযোগ নিয়ে বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতার ছেলে শাহনূর ইসলাম রনি।

যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন : এদিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ফরিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা প্রস্তুত। ইতোমধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রিটার্নিং অফিস সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার সদস্য নির্বাচনি কাজে নিয়োজিত থাকবে।

নির্বাচনে একজন মেয়র, ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৫৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৯ জন নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হবে। অবশ্য এদের মধ্যে একজন সাধারণ কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনী এলাকার ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রে ৩ হাজার ৪৯৭টি ভোট কক্ষ থাকবে।

নির্বাচনে ১০ হাজার ৯৭১ জন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে ৪৮০ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৩ হাজার ৪৯৭ জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং ৬ হাজার ৯৯৪ জন পোলিং অফিসার। সিটি এলাকার ৩৩৩টি প্রতিষ্ঠানে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে ৯৪টি প্রতিষ্ঠানে ২টি করে ভোটকেন্দ্র, ১৬টি প্রতিষ্ঠানে ৩টি করে ভোটকেন্দ্র, ৯টি প্রতিষ্ঠানে ৪টি করে ভোটকেন্দ্র এবং একটি প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র থাকছে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রধারী একজন এসআই বা এএসআই ও তিনজন কনস্টেবল, একজন অস্ত্রধারী অঙ্গীভূত আনসার পিসি, একজন এপিসি (অস্ত্রধারী) এবং ১০ জন আনসার বা ভিডিপি সদস্যসহ মোট ১৬ জন দায়িত্ব পালন করবেন। আর গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে এদের সঙ্গে আরও একজন কনস্টেবলসহ মোট ১৭ জন দায়িত্ব পালন করবেন।

এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স সিটির প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি, প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে স্ট্রাইকিং ফোর্স একটি এবং মহানগরের ৮টি থানায় একটি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে।

এছাড়া প্রতি দুটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে টিমসহ র‍্যাবের মোট ৩০টি টিম, ৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন হিসেবে বিজিবির ১৩ প্লাটুন সদস্য এবং প্রতি তিনটি সাধারণ ওয়ার্ডে একজন করে মোট ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।

ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্তরা আসতে শুরু করেছেন গাজীপুরে। ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভোটগ্রহণের আগের দুদিন (মঙ্গলবার থেকে), ভোটগ্রহণের দিন এবং ভোটগ্রহণের পরের দুদিন (২৭ মে) পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।

ফ্যাক্টর নতুন ভোটার : গাজীপুর সিটি করপোরেশনে এবারের নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে ১০.৭৮ শতাংশ। এবারের নবীন ভোটারদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার বৃদ্ধির হার শতকরা ৫.৭৭ ভাগ। ফলে এবার প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে নবীন তথা নারী ভোটাররাই একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে।

এবার নির্বাচনে গত নির্বাচনের চেয়ে ভোটার বেড়েছে ৪১ হাজার ৭৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২২ হাজার ৮২৭ এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৯৫। এছাড়াও হিজড়া ভোটার ১৮ জন রয়েছেন।

গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এএইচএম কামরুল হাসান জানান, সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী এবারের সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং হিজড়া ভোটার সংখ্যা ১৮ জন।

২০১৮ সালে গাসিকের নির্বাচনকালে একই এলাকার মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন। এর আগে ২০১৩ সালে গাসিকের প্রথম নির্বাচনকালে ওই এলাকার মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৮। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৭৭৭ জন এবং নারী ভোটার ছিল ৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৬১ জন। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে মোট পুরুষ ভোটার সংখ্যার চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা কম। তবে গত নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটার বেশি বেড়েছে এবং এ বৃদ্ধির হার হলো ৫.৭৭%। তবে সামগ্রিক ভোটার বৃদ্ধির হার হলো ১০.৭৮%। এজন্য ভোটার কেন্দ্র এবং ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাসহ আনুষঙ্গিক জনবলও বাড়ানো হয়েছে। গত নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ৪২৫টি, এবার তা বেড়ে হয়েছে ৪৮০টি।

এছাড়া ভোট কক্ষ বেড়ে হয়েছে ৩,৪৯৭টি। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার বাড়ানো হয়েছে। তিনি জানান, এ নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য প্রতি ভোটকেন্দ্রে একজন করে প্রিসাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও প্রতি ভোট কক্ষে একজন করে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও দুজন করে পোলিং অফিসার নিয়োজিত থাকবেন।

নগরীর ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোট গ্রহণের জন্য মোট ৪৮০ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৩,৪৯৭ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ৬৯৯৪ জন পোলিং অফিসারকে ইতোমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত আরও শতকরা ৫ ভাগ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বিশেষ পরিস্থিতির জন্য।

ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা ছাড়াও প্রার্থীদের এজেন্ট থাকতে পারবেন। গাজীপুর আদালতের সাবেক এপিপি মো. আসাদুল্লাহ বাদল বলেন, পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার বেশি বৃদ্ধির তিন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে নারীদের চেয়ে পুরুষ মৃত্যুর হার বেশি। জেলায় নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি প্রবাসী থাকায় তাদের অনেকেই ভোটার হননি।

ভোট পর্যবেক্ষণে মনিটরিং সেল: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে উচ্চ পর্যায়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। এই সেল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন থেকে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান জানান, নির্বাচন কমিশনের আইডিয়া-দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েমকে প্রধান করে সাত সদস্যের ওই সেল গঠন করা হয়েছে।

সেলের অন্য সদস্যরা হলেন, জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব পদমর্যাদার নিম্নে নয় এমন একজন কর্মকর্তা; পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের পুলিশ সুপার/অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার নিম্নে নয় এমন একজন কর্মকর্তা; বিজিবি/র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)/আনসার ও ভিডিপির উপপরিচালক পদমর্যাদার নিম্নে নয় এমন একজন কর্মকর্তা এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার/সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার নিম্নে নয় এমন একজন কর্মকর্তা।

মনিটরিং সেলের দায়িত্ব: (ক) নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে অবগতকরণ; (খ) সেলে অন্তর্ভুক্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধি কর্তৃক নির্বাচন উপলক্ষে মোতায়েনকৃত আইনশৃঙ্খলা সদস্যদের অবস্থান ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাতকরণ; (গ) ভোটকেন্দ্র বা নির্বাচনি এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় সাধন।

(ঘ) ইভিএমসহ বিভিন্ন নির্বাচনি মালামাল পরিবহন, বিতরণ এবং ভোটগ্রহণ কাজে নিরাপত্তা বিধানের জন্য মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং ও প্রিসাইডিং অফিসারদের সহায়তা প্রদান। (ঙ) সংস্থার নিজস্ব যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কমিশনের নির্দেশনা তাৎক্ষণিকভাবে অবহিতকরণ।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদের প্রার্থীরা হলেন— মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির রাজু আহাম্মেদ।

স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা), ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ ও হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরার (মোট চার হাজার ৪৩৫টি) মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ