নয়া শতাব্দী অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি।
দুই বছর বা তারও বেশি সময়ের দণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। পাশাপাশি দণ্ডিত ব্যক্তিদের আপিল উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকলেও তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। হাইকোর্টের দেয়া পর্যবেক্ষণসহ এ-সংক্রান্ত রায় নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। এ রায়ের ফলে শুধু বিএনপিরই নয়, আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও এমপিসহ বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে জানা গেছে।
যারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদিসহ চারজন সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্য হাজী সেলিমও রয়েছেন। দণ্ডিতদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া। আইনজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি সংবিধানসম্মত। আবার কারও মতে, আগামী নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে এমন পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, হাইকোর্টেও নতুন ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হবেন। এর অর্থ হলো, এখন কেউ যদি দণ্ডপ্রাপ্ত হন এবং তার আপিল যদি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকে, তাহলে তিনি খালাস না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। অর্থাৎ এটা যদি কার্যকর হয়, তাহলে আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই আগামী জাতীয় নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে। ফলে আপিল করেও দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকবেন। তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটি আপিল বিভাগেই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা বাঞ্ছনীয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তথ্যানুযায়ী, দণ্ডিত হওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন এমন আওয়ামী লীগ নেতারা হলেন, এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও কক্সবাজারের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। তারা প্রত্যেকেই দুই বছরের বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে তাদের আপিল বিচারাধীন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ কয়েকজন নেতা হাইকোর্টে খালাস পেয়েছেন। কিন্তু হাইকোর্টেও রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে দুদক, যা এখনো বিচারাধীন। আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকায় এবং আপিলি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই বলে বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
এছাড়া, ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর দুর্নীতির মামলায় দুই বছরের বেশি দণ্ডিত বিএনপির পাঁচ নেতার দণ্ড ও সাজা স্থগিতের আবেদন খারিজ করে সংক্ষিপ্ত রায় দেন হাইকোর্ট। পাঁচ বছর পর দুই বিচারপতির স্বাক্ষর শেষে ৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সমপ্রতি সুপ্রিম কোর্টেও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। আবেদনকারী বিএনপির পাঁচ নেতা হলেন- ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মো. আবদুল ওহাব, মো. মশিউর রহমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আমান উল্লাহ আমান। রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। অবশ্য যতক্ষণ না আপিল বিভাগ ওই রায় বাতিল বা স্থগিত করে তাকে জামিন দেন। কারণ, কোনো আদালতের দেয়া সাজার বিরুদ্ধে আপিল বিচারাধীন থাকলেও দণ্ড বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এই দণ্ড কার্যকর থাকে। এটা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে পুরোপুরি বাধা। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের বিধানই প্রাধান্য পাবে।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিতদের খালাস না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই এমন মন্তব্য করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, নৈতিক স্খলনের মামলায় দুই বছর বা তার বেশি সাজা হলে সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনে অযোগ্য হন। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিষয়ে তিনি বলেন, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করা হয়েছে। সংবিধানের এ-সংক্রান্ত ৬৬(২)(ডি)-এর ব্যাখ্যা হাইকোর্ট রায়ে তুলে ধরেছেন খুরশিদ আলম। রায়ে বলা হয়েছে, সাজা কখনো স্থগিত হয় না। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড বহাল থাকবে।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ