ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

রাস্তার সস্তা হোটেলেও খেতে পারছেন না নিম্নআয়ের মানুষ

প্রকাশনার সময়: ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৮

নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। ফলে বেড়েছে হোটেল-রেস্টুরেন্টে খাবারের দাম। স্বল্প আয়ের মানুষ এখন তিন বেলা খাওয়ার টাকা জোগাতে পারছেন না। বাধ্য হয়েই তাদের অনেকে পুরি-সিঙ্গারা খাচ্ছেন এক বেলায়।

মোহাম্মদ হানিফ, ৪৫ বছর বয়সি মানুষটি প্রায় ১৩ বছর ধরে ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করেন। মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকার একটি ঝুপড়ি দোকানে দুপুরের খাবার খেতে এসেছেন তিনি।

কথা হয় হানিফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হোটেলে কখনও ভাজি দিয়ে খাই, কখনও ডাল দিয়ে। মাছ-মাংস দিয়ে এখন আর খেতে পারি না। দাম বেড়ে গেছে। সারা দিন কাজ করার পর যা পাই তা দিয়ে বাজার খরচও হয় না, হোটেলের খাবারও হয় না।’

একসময় হানিফের স্ত্রী-সন্তানরাও তার সঙ্গে ঢাকাতেই থাকতেন। এখন চড়ামূল্যের বাজারে কুলিয়ে উঠতে না পেরে বাকি সবাইকে গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদীতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আগে তিন বেলা হোটেলে খেয়েছি। এখন এক বা দুইবেলা খেতে পারি। অন্য সময় সিঙ্গারা বা পুরি খেয়ে থাকতে হয়। আগে হোটেলে ৩০-৩৫ টাকা দিয়ে পেট ভরে খেতে পারতাম। এখন এগুলো হয়ে গেছে ৭০-৮০ টাকা। অবস্থা এমন যে, নিজেও খেতে পারি না, বউকেও কিছু পাঠাতে পারি না।”

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ধানমন্ডির সীমান্ত স্কয়ারের সামনে ফুটপাতের দোকানে চা-রুটি খাচ্ছিলেন রিকশাচালক জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, ‘আগে একটা রুটির দাম ছিল ১০ টাকা, এখন ১৫ টাকা। এক কাপ চায়ের দাম ছিল পাঁচ টাকা, এখন কমপক্ষে আট টাকা। সারা দিন রিকশা চালিয়ে যা পাই, তাতে হোটেলে খেলে পকেটে আর কিছুই থাকে না। এজন্য এখন চা-রুটি খেয়ে কাজ করি।’

জাকির আরও বলেন, ‘সকাল ৯টায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। এখন বাজে প্রায় সাড়ে ১২টা। এখন পর্যন্ত ৬০ টাকা আয় হয়েছে। যাত্রী এখন আগের তুলনায় কম। আগে রিকশার জমা ছিল ১০০ টাকা এখন হয়েছে ১৫০ টাকা। আমাদের আয় বাড়েনি, উল্টো যাত্রী কমে গেছে। কিন্তু খরচ অনেক বেড়ে গেছে।’

রিকশাচালক হানিফ যে দোকানে খাওয়া-দাওয়া করছিলেন সেটির মালিক জামাল মিয়া। তিনি জানালেন, ক্রেতার অভাবে দোকান চালু রাখাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। জামাল বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে ব্যবসা করছি। এমন অবস্থায় আগে কখনও পড়িনি। আগে ব্যবসা করেছি একরকম, এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। টাকা নিয়ে বাজারে গেলে মনমতো জিনিসপত্র পাই না।’ তিনি বলেন, ‘আমার হোটেলে যারা খায়, তাদের থেকে দুই টাকা বেশি নেয়ার অবস্থাও নাই। এই হোটেল চালিয়ে এখন আর কোনো আয় হয় না। দিন শেষে ১০০ টাকা সঞ্চয় করতেও খুব কষ্ট হয়।’

কোন খাবারগুলোর চাহিদা বেশি জানতে চাইলে এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘কাস্টমাররা সকালে ২০ টাকা দিয়ে আলুভর্তা আর ভাত খায়। এক প্লেট ভাত ১০ টাকা আর একটা আলুভর্তা ১০ টাকা। দুপুরে থাকে রুই মাছ, মুরগি। এগুলো ৬০ টাকা করে বিক্রি করি। আছে তেলাপিয়া, পাঙাশ, ডিম।’

ধানমন্ডি সাতমসজিদ রোডের এনাম র‍্যাংসের সামনের ফুটপাতে খাবার বিক্রি করেন সাহেরা খাতুন। তার দোকানে ভাত খাচ্ছিলেন পাঁচজন রিকশাচালক। হাড়ভাঙা খাটুনির পর তাদের মধ্যে তিনজনই সবজি-ডাল দিয়ে কোনোমতে পেটে জামিন দিচ্ছিলেন।

হোটেলে খাবারের দাম বেড়েছে কি-না জানতে চাইলে সাহেরা বলেন, ‘এখন সবকিছুর দাম অতিরিক্ত বেড়েছে। কিন্তু আমরা আমাদের খাবারের দাম বাড়াতে পারছি না। দাম বাড়ালে কাস্টমার খাইতে চায় না।’

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতের দোকানগুলোতে খাওয়া-দাওয়া করেন শ্রমজীবী মানুষ। যাদের একটি বড় অংশ রিকশাচালক। এসব দোকানের ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছেন দিনমজুর, ডেলিভারিম্যান ইত্যাদি পেশার মানুষ।

এখন এসব হোটেলেও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকার আশপাশে। যা আগে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। পাঙাশ, তেলাপিয়া, কই মাছ আগে বিক্রি হতো ৩০-৩৫ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। ভর্তার দাম খুব একটা না কমলেও পরিমাণে কম দিচ্ছেন দোকানিরা। আগে এক বাটি ডাল ছিল পাঁচ টাকা, এখন ১০ টাকা। আগে যেসব সবজি-ভাজির দাম ছিল ১৫ টাকা এখন সেগুলো ২৫ টাকা।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যখন বেড়ে যায়, তখন মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে যায়।

এটা স্বাভাবিক। যখন একটা মুদ্রাস্ফীতির পরিবেশ বিরাজ করে, তখন ফুটপাতের দোকানের খাবার দাবারের দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। আর মুদ্রাস্ফীতি যখন দেখা দেয়, তখন সবার মধ্যে দাম বাড়ানোর একটা প্রবণতা দেখা দেয়। সে প্রবণতাও এসব দোকানেও রয়েছে।’

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ