ঢাকা, বুধবার, ৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

‘ঘুষের’ বিনিময়ে সংযোগ

প্রকাশনার সময়: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৫২

অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ না করলে সেসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হবে। তিতাস অফিসের কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী বা ঠিকাদার অবৈধ গ্যাস সংযোগে জড়িত থাকলে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অবৈধ সংযোগ প্রদানকারীদের কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে। এদের খুঁজে বের করে কঠিন বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

সম্প্রতি গাজীপুর ডিভিশন ও সাভার আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন পোশাক কারখানার মালিক ও বাড়ির মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ মোল্লাহ। এমন হাঁকডাক ও নীতিবাক্য আওড়িয়ে খোদ সেই তিতাস এমডিই অবশেষে আশ্রয় নিয়েছেন প্রতারণার। ঘুষের বিনিময়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে অবৈধ পন্থায় গ্যাসের সংযোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ যেন ‘সর্ষের মধ্যেই ভূত’।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব বরাবরে করা এক আবেদনের অভিযোগে জানা যায়, ‘সিলভার নীট কম্পোজিট’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিতাসের ডিজিএম (জি) নোট দিয়েছেন ‘মন্ত্রী মহোদয়ের অফিস থেকে প্রেরিত, আলাপ করবেন।’ এ সংক্রান্ত তথ্য প্রমান এখন নয়া শতাব্দীর হাতে রয়েছে। আর সেই নোটসহ অগ্রগামী করেছেন তিতাসের এমডি প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ মোল্লাহ। জ্বালানিমন্ত্রী তথা প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে উৎকোচ গ্রহণ করে ‘সিলভার নীট কম্পোজিট’ নামক এ প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ পন্থায় গ্যাসের সংযোগের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছেন বলে অভিযোগ। এ ধরনের একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে, অথচ সেই রেফারেন্স কোনো যাচাই-বাছাই না করেই অনুমোদন দেয়াকে পুরোপুরি যোগসাজশ বলে মনে করছেন অনেকেই।

দরখাস্তে অভিযোগ করা হয়, ‘সিলভার নীট কম্পোজিট’ প্রতিষ্ঠানটির আবেদনে মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কারও স্বাক্ষর বা সুপারিশ না থাকলেও শুধু উৎকোচের বিনিময়ে মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে ছয় মাস পূর্বে করা এসএম এক্সেসরিজ নামক আরও একটি প্রতিষ্ঠানের আবেদন সংযুক্ত করে দুটি প্রতিষ্ঠানের ফাইল তড়িঘড়ি করে পাস করিয়ে নেয়। প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে ঘুষের বিনিময়ে এভাবে তিতাস গ্যাসের অবৈধ পন্থায় সংযোগ দেয়া ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করে। তাছাড়া ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীকে বিপদে ফেলার উদ্দেশে এ দুরভীসন্ধীমূলক কর্মকাণ্ড বলে দরখাস্তে দাবি করা হয়। অভিযোগে আরও প্রকাশ, তিতাস গ্যাসের আরও নানা রকম অনিয়মের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমান এমডি যোগদান করার পর থেকে সিস্টেম লস বেড়ে গেছে। আগে যেখানে ৫ থেকে ৬ শতাংশ সিস্টেম লস ছিল, এখন সেখানে ৮ থেকে ৯ শতাংশ দেখানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সিস্টেম লস ১২ থেকে ১৩ শতাংশ হবে। এতে করে তিতাস গ্যাস সৃষ্টির পর থেকে এবারই প্রথম লোকসানের স্বীকার হয়েছে। তাছাড়া ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করে অফিসে ফিরে এমডি সবার মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন।

এমন দৃষ্টিকটু কাজের প্রতিবাদ করায় অনেকের চাকরিচ্যুতি ও পদাবনমন হয়েছে। তিতাস এমডির এহেন অসদাচরণ, অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত চলমান রয়েছে। এছাড়া আউটসোর্সিংয়ে লোকবল নিয়োগে দুর্নীতি, একাধিক গাড়ির অপব্যবহারসহ অনেক অভিযোগ আনা হয়েছে। দরখাস্তটিতে মোট ১৩টি দফার মাধ্যমে তিতাস এমডির বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির ফিরিস্তি উল্লেখ করা হয়।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-২) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো চিঠি আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে একটি ফাইল তোলা হয়েছে। ফাইল অনুমোদন হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পেট্রোবাংলায় প্রেরণ করা হবে। শিগগিরই পেট্রোবাংলায় চিঠি যেতে পারে বলে জানিয়েছেন যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন।

এদিকে মুখ্য সচিব বরাবর করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার বিষয়টি ইতোমধ্যেই জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিবকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-১১, রুপালী মন্ডল স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বিষয়াদী পরীক্ষান্তে বিধি মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করার জন্য জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগকে বলা হয়েছে। যার পত্র সংখ্যা-০৩.০০.২৬৯০.০৭৮. ২৭.০০৭. ২০২০-১১১, তারিখ: ২৯/০৮/২০২৩ ইং।

অফিস আদেশটির ‘বিষয়: বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) নাম ব্যবহার করে উৎকোচ গ্রহণ করত: শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের সংযোগ প্রদানসহ নানাবিধ অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে’।

চিঠিতে বলা হয়েছে, উল্লেখিত বিষয়ে সূত্রোস্থ পত্র ও সংযুক্তিগুলোর ছায়ালিপি এতদসঙ্গে পেরণ করা হলো। সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব বরাবর আ. লতিফ কর্তৃক স্বব্যাখ্যাত অভিযোগপত্র। এসব অভিযোগ ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রেরিত চিঠির বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেছেন, অভিযোগ কিংবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

তিনি বলেন, আমাকে চেয়ার থেকে সরাতে একটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা রকম মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙানোর প্রশ্নই আসে না। তিতাসের কিছু অসাধু কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় একটি গ্রুপ নাখোশ হয়েছে। তারাই ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ